
সম্প্রতি বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া গুজব এবং আলোচনাকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য বলে প্রত্যাখ্যান করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয় স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, বাংলাদেশের সিভিল সার্ভিসে (BCS) কর্মকর্তা নিয়োগের প্রক্রিয়া অত্যন্ত স্বচ্ছ, সুশৃঙ্খল এবং মেধার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। এখানে লটারির মাধ্যমে পদায়নের কোনো সুযোগ নেই, বর্তমানেও নেই এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. মোখলেস উর রহমান এক সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করেন। তিনি বলেন, "বিসিএস নিয়োগ পদ্ধতি একটি সুনির্দিষ্ট আইনি কাঠামো এবং বিধিমালা দ্বারা পরিচালিত হয়। এখানে মেধা, যোগ্যতা এবং পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমেই প্রার্থীরা চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হন।"
তিনি আরও বলেন, "কিছুদিন আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জেলা প্রশাসক (ডিসি) বদলির কাজটি লটারির মাধ্যমে করা যায় কিনা, এমন একটি আলোচনা উঠেছিল। এটি ছিল কেবল একটি আলোচনা, যা কখনোই বাস্তবায়িত হয়নি। এই আলোচনাকে কেন্দ্র করে সিভিল সার্ভিস নিয়োগের পুরো প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে, যা দুঃখজনক।"
সিভিল সার্ভিস নিয়োগের প্রক্রিয়া: মেধা এবং যোগ্যতার ভিত্তিতে
বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশ পাবলিক সার্ভিস কমিশন (BPSC) কর্তৃক পরিচালিত হয় এক দীর্ঘ ও কঠোর পরীক্ষা প্রক্রিয়া। এই প্রক্রিয়া তিনটি মূল ধাপে বিভক্ত:
-
প্রিলিমিনারি পরীক্ষা: ২০০ নম্বরের এই এমসিকিউ পরীক্ষাটি প্রাথমিক বাছাইয়ের জন্য অনুষ্ঠিত হয়।
-
লিখিত পরীক্ষা: প্রিলিমিনারিতে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের জন্য ৯০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা হয়। এই পরীক্ষায় বিষয়ভিত্তিক জ্ঞান ও বিশ্লেষণের গভীরতা যাচাই করা হয়।
-
মৌখিক পরীক্ষা (ভাইভা): লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের জন্য ১০০ নম্বরের মৌখিক পরীক্ষা হয়। এখানে প্রার্থীর ব্যক্তিত্ব, মানসিক সচেতনতা, নেতৃত্বগুণ, এবং সাধারণ জ্ঞান যাচাই করা হয়।
এই তিনটি ধাপের পরীক্ষার প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই প্রার্থীদের চূড়ান্ত মেধা তালিকা প্রণয়ন করা হয়। এরপর স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গেজেট প্রকাশের মাধ্যমে তাদের নিয়োগ চূড়ান্ত করে।
গুজব: কেন ছড়ানো হচ্ছে?
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একটি অস্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে এবং সরকারের বিরুদ্ধে জনমতকে প্রভাবিত করার জন্য একটি মহল এ ধরনের ভিত্তিহীন গুজব ছড়াচ্ছে। এর উদ্দেশ্য হলো জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা এবং রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর থেকে আস্থা নষ্ট করা।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এই ধরনের মিথ্যা তথ্য থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছে। তারা নিশ্চিত করেছে যে, মেধা এবং যোগ্যতার ওপর ভিত্তি করে একটি শক্তিশালী ও দক্ষ সিভিল সার্ভিস গড়ে তোলার নীতিতে সরকার অটল।