রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

এনসিপি ও গণঅধিকার কীভাবে, কেন একীভূত হতে চাইছে?

প্রকাশ: সোমবার, ২২ সেপ্টেম্বর , ২০২৫
এনসিপি ও গণঅধিকার কীভাবে, কেন একীভূত হতে চাইছে?
আরো পড়ুন

বাংলাদেশের তরুণদের নিয়ে গঠিত দুইটি দল গণঅধিকার পরিষদ ও জাতীয় নাগরিক পার্টি একীভূত হওয়ার বিষয়ে আলোচনা করছে বলে জানা যাচ্ছে, যা রাজনৈতিক মহলে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এ বিষয়ে দলীয় পর্যায়ে কয়েক দফা আলোচনা হলেও আনুষ্ঠানিকভাবে এখনও ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

 

দুই দলের কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিন সপ্তাহে বেশ কয়েকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। দুই দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যেমন হয়েছে, তেমনি দলীয় পর্যায়েও বৈঠক হয়েছে।

 

সেখানে দুই দলের একীভূত হওয়ার বিষয়ে বেশ কিছু আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে দলগুলোর নেতারা জানিয়েছেন। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসেনি। বিশেষ করে একটি নিবন্ধিত দলের সঙ্গে আরেকটি অনিবন্ধিত দল কীভাবে এক হবে, দলের নেতৃত্ব কাঠামো কি হবে, ইত্যাদি বিষয়ে এখনো আলোচনা চলছে।

 

২০১৮ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনে গণঅধিকার পরিষদের নেতারা এবং ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে এনসিপির নেতাদের বিশেষ ভূমিকা ছিল। মূলত তরুণদের নিয়েই এই দল দুটি গঠিত হয়েছে।

 

দুই দলের একীভূত হওয়ার এসব তথ্য এমন সময়ে জানা যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশে সাধারণ নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়েছে। অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হওয়ার কথা রয়েছে।

 

তার আগে হঠাৎ করে কেন একীভূতকরণের বিষয়ে ভাবছেন এই দুই দলের নেতারা? আসলে ঠিক কী ঘটছে দল দুটিতে? কিভাবে ও কোন প্রেক্ষাপটে হবে এই একীভূতকরণ? এমন প্রশ্ন সামনে এসেছে।

 

কেন দুই দলের একীভূত হওয়ার উদ্যোগ

 

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও গণঅধিকার পরিষদ দুই দলেরই প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট প্রায় একই রকম। কোটা সংস্কার আন্দোলনের ভিত্তি ধরে দুই দলেরই যাত্রা শুরু।

 

২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গঠিত হয় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। পরবর্তীতে ২০২১ সালে ওই আন্দোলনের নেতারা মিলে গণঅধিকার পরিষদে নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন।

 

এর আগে, ২০১৯ সালের ডাকসু নির্বাচনে একই প্যানেল থেকে ভিপি প্রার্থী হিসেবে নুরুল হক নুর, জিএস ক্যান্ডিডেট হিসেবে রাশেদ খান এবং নাহিদ ইসলাম ও আখতার হোসেনও এই প্যানেল থেকে নির্বাচন করেছিলেন।

 

পরে ২০২১ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরকে কেন্দ্র করে যখন আন্দোলন-বিক্ষোভ হয় তখনও এই নেতাদের মাঠে একসাথে দেখা যায়। পরে ২০২৪ সালের কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে গড়ে ওঠে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

 

এই প্ল্যাটফর্মের সঙ্গে জড়িতরাই আওয়ামী লীগ সরকার পতনের কিছুদিন পর গড়ে তোলেন জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি। ২০১৮ সাল থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এই দুই দলের নেতাদেরই আন্দোলনের মাঠে একসঙ্গে দেখা যায়।

 

বিশ্লেষকরা বলছেন, নুরুল হক নুরের সঙ্গেই এনসিপির অনেক নেতার রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড শুরু হয়েছিল।

 

এদিকে, গণঅধিকার পরিষদ গত বছর নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন পেলেও, এ বছর প্রতিষ্ঠিত এনসিপি এখনো নিবন্ধন পায়নি। প্রতিষ্ঠার অল্প দিন হলেও সমালোচনা ছাড়ছে না দলটির নেতা-কর্মীদের।

 

তরুণদের নিয়ে গঠিত হলেও সম্প্রতি অনুষ্ঠিত ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে উভয় দলের সমর্থিত প্যানেলের ভরাডুবি হয়েছে। এমন প্রেক্ষাপটে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চলছে দুই দলের একীভূতকরণের প্রসঙ্গ।

 

গত ২৯শে অগাস্ট দলটির সভাপতি নুরুল হক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিপেটায় আহত হওয়ার পর থেকে এই আলোচনা আরও জোরালো হয়।

 

গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান বলেন, ‘এখন পর্যন্ত অনানুষ্ঠানিভাবে দুই দলের যে আলোচনা হয়েছে, সেটা ইতিবাচক ও ফলপ্রসু হয়েছে। দুটি দল কিভাবে একসঙ্গে কাজ করতে পারে সে বিষয়ে কথা হয়েছে।’

 

দলটির সাধারণ সম্পাদক দুই দলের একসঙ্গে পথ চলার ব্যাপারে আশা প্রকাশ করেন।

 

ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ভরাডুবি এই সিদ্ধান্তের কারণ কিনা এমন প্রশ্নে রাশেদ খান জানান, তরুণদের বিভাজনের কারণে সেখানে ফল খারাপ হয়েছিল। তাই এই বিভাজনের সুযোগ অন্য কোনো রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি ব্যবহার করেছে।

 

রাশেদ বলেন, তরুণরা যখন বিভাজিত থাকবে তখন তারা সফল হতে পারবে না। গণ-অভ্যুত্থান সফল হয়েছে কারণ আমরা সবাই মিলে একসাথে কাজ করেছি।

 

ঠিক একইভাবে গণঅধিকার পরিষদ ও এনসিপি একসঙ্গে কাজ করতে পারে এবং আমাদের যে ছাত্র সংগঠন ছাত্র অধিকার পরিষদ বা বাগছাস তারাও একসঙ্গে যদি কাজ করতো তাহলে মানুষ ভোট দিতো। কেন মানুষ ভোট দেওয়ার ক্ষেত্রে পিছপা হয়েছে? কারণ মানুষ দেখেছে তরুনরা বিভাজিত। ডাকসু ও জাকসু নির্বাচনে ফল খারাপ হওয়া অবশ্যই একটা ব্যাপার।’

 

দুই দলেরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য একই রকম হওয়াটাও এই একীভূতকরণের কাজে লেগেছে বলে জানান তিনি।

 

তবে দুই দল একীভূত হলে শীর্ষ নেতৃত্বে কারা থাকবেন এমন প্রশ্নে তিনি জানান এখনও পর্যন্ত এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে, নাহিদ ইসলাম ও নুরুল হক নূর নেতৃত্বের শীর্ষে এগিয়ে থাকবেন বলেও মন্তব্য করেন রাশেদ।

 

এছাড়াও আখতার হোসেনসহ এমন গ্রহণযোগ্য নেতৃত্বকেই সামনে রাখা হবে বলেও জানান তিনি।

 

দলের নাম কি হবে এমন প্রশ্নে রাশেদ জানান, দুই দলের যে কোনো এক নাম অথবা নতুন নামে আত্মপ্রকাশ করতে পারে দলটি।

 

নতুন হতে যাওয়া দলটির উদ্দেশ্য হবে নতুন বাংলাদেশ গঠনে একসঙ্গে কাজ করা, মুক্তিযুদ্ধের মূলনীতি (সাম্য ও মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার) প্রতিষ্ঠা করা এবং জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে একসঙ্গে কাজ করা।

 

গত একমাসে এই বিষয়ে আলোচনার জন্য বেশ কয়েকটি বৈঠক হয়েছে। এর মধ্যে ব্যক্তি পর্যায় ও দলীয় পর্যায়ে বৈঠক হয়েছে।

 

একইসঙ্গে দুই দলের শীর্ষ নেতারা একটি বৈঠকও করেছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

 

কয়েক দফা বৈঠক, বেশ কিছু সিদ্ধান্ত

 

গণঅধিকার পরিষদ একটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল এবং সারা দেশে দলটির অসংখ্য নেতাকর্মী রয়েছে। ফলে কী প্রক্রিয়ায় এই দুই দল একীভূত হবে সে বিষয়ে আলোচনা এখনো চলছে বলে জানিয়েছেন দল দুটির নেতারা।

 

জাতীয় নাগরিক পার্টির মুখ্য সংগঠক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, যেহেতু দলটির সারা দেশে অসংখ্য নেতাকর্মী রয়েছে এবং নিবন্ধিত দল। তাই কী প্রক্রিয়ায় একীভূত হবে সে বিষয়ে এখনো আলোচনা চলছে।

 

গণঅধিকার পরিষদের ব্যানার ও অন্যান্য সবকিছু ‘ডিজলভ’ করার বিষয়েও দলটি সম্মত হয়েছে বলে জানান তিনি।

 

এরই মধ্যে কয়েক দফা বৈঠকে দল দুইটি বেশ কিছু সিদ্ধান্তে পৌঁছুছে বলে জানিয়েছেন পাটওয়ারী।

 

তবে, প্রাথমিকভাবে দুই দলের এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও গণমাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেওয়া হয়নি।

 

যদিও তিনি দাবি করেন, একীভূত নয় বরং গণঅধিকার পরিষদ তাদের দলে যোগ দেবেন।

 

একীভূত হওয়া না, তাদের যোগ দেওয়ার বিষয়টি আমরা কনসিডারেশনে নিয়েছি। এনসিপির যে নামটা আছে সেইটাই থাকবে। ওইখান থেকে যারা নেতারা রয়েছেন, তারা এখানে এসে যোগ দেবেন।’

 

দুই দলই নেতৃত্ব নিয়ে একমত হয়েছে জানিয়ে পাটওয়ারী বলেন, নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন নেই। অর্থাৎ এখানে কালেক্টিভ লিডারশিপে যেহেতু চলে আসছে এতোদিন। হয়তো আমাদের আহ্বায়ক বা সদস্য সচিব কেউ তাদের রোলটা প্লে করতেছে। তারা আসলেও কালেক্টিভ লিডারশিপ ডিসিশন মেকিং এই জায়গাটা একীভূত হবে।

 

এরপর দক্ষতা অনুযায়ী দলে পদ বন্টন করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান তিনি।

 

তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলটির আরেকজন নেতা জানান, নতুন দলের প্রধান হিসেবে নাহিদ ইসলামের নাম বিভিন্ন বৈঠকে আলোচিত হয়েছে।

 

দীর্ঘমেয়াদী রাজনৈতিক কলাকৌশল নিয়ে এই দল দুইটি রাজনীতির মাঠে নেমেছে বলে দাবি করেন নেতারা। পুরোনো রাজনৈতিক জোট বা দলে এই জেনারেশন যাচ্ছে না।

 

এখন যেহেতু আমাদের দুইটা পার্টি হয়েছে তাই এখন সময় হয়েছে একসাথে কাজ করার। এজন্যই একসাথে ফাইটিং এ যাওয়ার বিষয়টা এসেছে। আমাদের জেনারেশনের যারা তাদের এই পলিটিক্সটা দিতে হবে। এটা আমাদের রেসপনসিবিলিটি বলেন এনসিপির এই নেতা। এছাড়াও ধর্মীয় রাজনীতিও ‘অ্যালাউ করবো না’ বলেন পাটওয়ারী।

 

এক হওয়ার পেছনে দুই দলের নানা হিসাবনিকাশ

 

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে এ ধরনের জোট করা বা দল করা খুব স্বাভাবিক।

 

এছাড়া দুই দলের নেতারাই চিন্তার দিক থেকে একই ঘরানার। ২০১৮ সাল থেকেই তাদের চিন্তার ঐক্য রয়েছে।

 

গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের দল জাতীয় নাগরিক পার্টি এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে আত্মপ্রকাশ করে। বেশ আশাভরসা নিয়েই রাজনীতির মাঠে আসে দলটি।

 

সাব্বির আহমেদ মনে করেন, দলটির সদস্যদের নানা ধরনের দুর্নীতি, স্ক্যান্ডালের কারণে সেই আশা হতাশায় পরিণত হয়েছে।

 

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়ে গেলে এনসিপির সঙ্গে অধ্যাপক মো. ইউনূসের দূরত্ব তৈরি হয়ে যাবে বলে মনে করেন সাব্বিন আহমেদ।

 

এনসিপি হয়তো বুঝতে পারছে তার নিজের মাটি শক্ত করা খুব জরুরি। কারণ ইউনূসের সঙ্গে তাদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়ে যাবেই। এটা হতে বাধ্য। কারণ নির্বাচন হয়ে গেলে ইউনূস অটোমেটিক চলে যাবেন বলেন এই শিক্ষক।

 

এছাড়া নেতা হিসেবে তরুণদের মধ্যে গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরের ইমেজ বেশ গুরুত্বপূর্ণ। যা এনসিপি কাজে লাগাতে চাইছে বলেও মনে করেন তিনি।

 

একইসঙ্গে নুরুল হক নূরেরও এক্ষেত্রে দলীয় হিসাব-নিকাশ রয়েছে বলে জানান তিনি।

 

জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আসন পাওয়ার হিসাবে গণঅধিকার পরিষদ বা এনসিপি এখনো পৌঁছায়নি বলে মনে করেন সাব্বির আহমেদ। তবে, নির্বাচনের আগে বড় দলের সঙ্গে সমঝোতা বা জোট হলে দুই - একটা আসন পাওয়া নিশ্চিত হতেই পারে বলে মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক।

 

সূত্র: বিবিসি বাংলা।

কৃষি কর্মকর্তাকে মারধর করে ভাইরাল সেই ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর , ২০২৫
কৃষি কর্মকর্তাকে মারধর করে ভাইরাল সেই ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার
আরো পড়ুন

নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের কৃষি প্রণোদনার তালিকায় নাম না দেওয়ায় কার্যালয়ে ঢুকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে মারধর ও হেনস্তা করার অভিযোগে শেরপুরের নকলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাহাত হাসান কাইয়ুমকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

 

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

 

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন। এতে রাহাত হাসানকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

 

এর আগে, বুধবার শেরপুরের নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহারিয়ার মুরসালিন মেহেদীকে তার অফিস কক্ষে মারধর ও হেনস্তা করেন নকলা উপজেলা ছাত্রদল নেতা রাহাত হাসান কাইয়ুম। যার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

 

এদিকে ঘটনার দিন রাতেই নকলা থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ছাত্রদল নেতা রাহাত হাসান কাইয়ুম ও সহযোগী ফজলুকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত রাহাত হাসান কাইয়ুম নকলা পৌরসভার ধুকুরিয়া গ্রামের সুরুজ মাওলা এবং ফজলু একই গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে।

 

জানা যায়, বুধবার বেলা সোয়া ২টার দিকে রাহাত ও ফজলু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে জানতে চান, কৃষি কর্মকর্তা কেন এখনো বদলি হচ্ছেন না? কারা কৃষি প্রণোদনা পেয়েছেন এবং নেতাদের ভাগ কত? এরপর তারা ছাত্রদলের ভাগ দাবি করেন।

 

এ সময় কৃষি কর্মকর্তা জানান, সরকারি প্রণোদনা প্রকৃত কৃষকদের জন্য। রাজনৈতিকভাবে কারও ভাগ দেওয়ার সুযোগ নেই। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন।

 

 

কৃষি কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি স্থানীয় বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলমকে জানালে রাহাত আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং সহযোগী ফজলুকে নিয়ে অফিসের ভেতরেই কর্মকর্তাকে মারধর শুরু করেন।

 

এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল বৃহস্পতিবার তাকে দল থেকে বহিষ্কারাদেশ দিয়েছে।

 

এদিকে, কৃষি কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় নিয়মিত মামলা গ্রহণ করে আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম।

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ নিয়ে চরম মতবিরোধ

জটিল সমীকরণে রাজনীতি

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর , ২০২৫
জটিল সমীকরণে রাজনীতি
আরো পড়ুন

নানা কারণে ফের জটিল সমীকরণে দেশের রাজনীতি। বিশেষ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে এখন দলগুলোর মধ্যে চরম মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। নোট অব ডিসেন্ট সুপারিশে লিপিবদ্ধ না করা ও গণভোটের সময় নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে এই বিভক্তি প্রবল হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা আদেশ দেবেন কোন ক্ষমতাবলে-তা নিয়েও বেশ কয়েকটি দল প্রশ্ন তুলেছে। এছাড়া কমিশনের আরও কিছু জায়গায় অস্পষ্টতা চিহ্নিত করে তা সংশোধন করার আহ্বান জানিয়েছে কয়েকটি দল। এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ সাড়ে ৮ মাসের কর্মকাণ্ডের ফলাফল কী-তা নিয়ে হিসাব মেলাতে পারছে না রাজনৈতিক মহল। 

 

 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বেশ লম্বা সময় নিয়ে পরিশ্রমসাধ্য একটি জার্নির পর ঐকমত্য কমিশন অবশেষে কাজ শেষ করেছে। কিন্তু কমিশন যেভাবে তাদের সুপারিশ দিয়েছে, তাতে ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’ এ কথাটি আর বলা যাচ্ছে না। বরং কমিশনের এতদিনের কাজকে অর্থহীন বলে প্রমাণ করার ঝুঁকি তৈরি করেছে। এছাড়া সৃষ্ট জটিল অবস্থার আশু সমাধান না হলে দেশ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে চলে যেতে পারে। এমনকি নির্বাচন নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।

 

তারা বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে হাতে সময় বাকি আছে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন মাস। সরকার এমনিতেই নানা সংকটে আছে। দেশের অর্থনীতি ভালো চলছে না, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট নাজুক। এর মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ, দ্বন্দ্ব বাড়ছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে পদ্ধতি প্রস্তাবিত হয়েছে, সেটা গ্রহণ করা কোনোক্রমে উচিত হবে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। রাজনৈতিক দলগুলোকেও একে অন্যকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। এমন পরিস্থিতিকে ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। কারণ ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিভেদের সুযোগ নেওয়ার জন্য পতিত আওয়ামী লীগ ওতপেতে বসে আছে।

 

এ অবস্থায় সরকারের শীর্ষ পর্যায়সহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারক মহলের নানান বক্তব্য ও মন্তব্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে জটিল এক সমীকরণ তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন দলগুলোর নানামুখী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুধু সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। সমাধান মিলছে না। আবার সরকারের তরফ থেকেও নানান শঙ্কার কথা জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি করছে।

 

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে যমুনায় প্রথম সমন্বয় সভা হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হবে। নির্বাচন বানচালের জন্য ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে বানচালের চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড়-ঝঞ্ঝাই আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।’

 

এর আগে মঙ্গলবার সচিবালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বদলে জাতীয় অনৈক্য প্রতিষ্ঠার একটা প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, যে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছে, সেই স্বাক্ষরিত সনদবহির্ভূত অনেক পরামর্শ বা সুপারিশ ও সনদ বাস্তবায়নের আদেশের খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে।

 

বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে বিষয়গুলোতে তারা একমত ছিলেন না, সেখানে তারা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন। সেই নোট অব ডিসেন্ট সুপারিশে লিপিবদ্ধ করার একটা প্রতিশ্রুতি ছিল কমিশনের। কিন্তু অবাক হয়ে তারা লক্ষ করলেন, সুপারিশে সেই বিষয়গুলো নেই। নোট অব ডিসেন্টগুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এটা তো ঐক্য হতে পারে না। তাহলে ঐকমত্য কমিশনটা করা হয়েছিল কেন? তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে এটা একটা প্রতারণা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা প্রতারণা।

 

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এত বড় একটা অভ্যুত্থান, এত ত্যাগের বিনিময়ে, এত প্রাণের বিনিময়ে সেটাকে ঠিকভাবে জাতির কল্যাণে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, যতই দিন যাচ্ছে, ততই বিভক্তি বাড়ছে। বিভক্ত হয়ে পড়াটা, এটা কারা করছেন, কেন করছেন, এটাও উপলব্ধি করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বুধবার জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠিক সময়ে হবে। তবে নির্বাচন কোনো কারণে পিছিয়ে গেলেও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন যেন না পেছায়, সেজন্য আগে গণভোট করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

 

বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে গণভোটের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গণভোটের তারিখ ঘোষণায় যত দেরি হবে, জাতীয় নির্বাচন তত সংকটের মধ্যে পড়বে। বুধবার রংপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশে নানামুখী সংকট তৈরি হয়েছে। পতিত স্বৈরাচারী শক্তি ষড়যন্ত্র করছে। নানামুখী সংকটের জন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। আমাদের দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধান করে এক জায়গায় থাকতে হবে। কেউ যদি মনে করে এককভাবে সব নেতৃত্ব দেবে, সরকার গঠন করে ফেলবে, এটি আসলে সম্ভব হবে না। দেশে সব পক্ষের মধ্যে ন্যূনতম ঐক্য না থাকলে এককভাবে সরকার গঠন ও সংসদ টিকিয়ে রাখা কারও পক্ষে সম্ভব হবে না। জনগণের ন্যূনতম আকাঙ্ক্ষা, সংস্কার, বিচারের দাবিকে উপেক্ষা করে নির্বাচনের দিকে যাওয়া হলে সেটি টেকসই হবে না।

 

একই দিন ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, কমিশনের প্রস্তাবিত প্রস্তাব-২-এর বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য নেই। এর ফলে গোটা সংস্কার কার্যক্রমই ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে। প্রস্তাব-১ এর ক্ষেত্রে কিছু জায়গায় অস্পষ্টতা চিহ্নিত করে তা সংশোধন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, ‘আগামী নির্বাচিত সভা সংবিধান সংস্কার বিষয়ে সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে’-এ স্থানে ‘করতে পারবে’ এর স্থলে ‘করবে’ লিখতে হবে এবং সংবিধান সংস্কার বিলের বিষয় ‘বিবেচনা করবে’-এ অস্পষ্টতাও দূর করতে হবে। গণভোটে প্রদত্ত সংবিধান সংস্কার বিলের খসড়া দ্রুত প্রণয়ন এবং জনগণের কাছে উন্মুক্ত করতে সরকারকে আহ্বানও জানান তিনি।

 

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি যুগান্তরকে বলেন, হঠাৎ করে মঙ্গলবার কমিশন সুপারিশ করেছেন, সেখানে নোট অব ডিসেন্টের উল্লেখ নেই। এটা তো কোনো ঐকমত্য হয়নি। এ প্রশ্নের ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই কমিশন দেবে। তারা জুলাই সনদ সই করেছেন। সনদে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) লেখা আছে। এটা দলগুলো নিজ নিজ ইশতেহারে দেবে। যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, ম্যান্ডেট পাবে, সেই দল নিজস্ব প্রস্তাব অনুযায়ী আপত্তির অংশগুলো মীমাংসা করবে।

 

জুলাই সনদের আদেশ জারি প্রসঙ্গে জোনায়েদ সাকি বলেন, অনেকে দাবি তুলছেন-আদেশ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা আদেশ দেবেন কোন ক্ষমতাবলে? সরকার আদেশ দেয়, সেটা রাষ্ট্রপতির নামে যায়, এটা যে কোনো রাষ্ট্রের নিয়ম। রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রতীক। যদি প্রধান উপদেষ্টা নিজে এটা জারি করেন, তার মানে তিনি নিজেকে রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে ঘোষণা করছেন এবং কার্যত সংবিধানকে স্থগিত করছেন। ঐকমত্য ছাড়া কেউ কারও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে তা কার্যকর হবে না। এটা সবার উপলব্ধি করা দরকার।

 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, খসড়ায় আদেশ কে দেবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। আদেশ জারির কারণ হিসাবে, ‘জনগণের জ্ঞাতার্থে ও সাংবিধানিক পরিষদের দায়িত্ব সম্পাদনের সুবিধার্থে’-উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো-এই আদেশের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকছে না। অবশ্য এই খসড়ার শুরুতেই গণ-অভ্যুত্থানের সার্বভৌম ক্ষমতা আছে বলে স্বীকার করা হয়েছে, কিন্তু জনতার অভিপ্রায়ের কোনো প্রয়োগ এই খসড়ায় দেখা যাচ্ছে না।

 

এদিকে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন, তাদের সবার আত্মত্যাগ ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি গণভোটে জুলাই সনদ পাশ না হয়। এজন্য জুলাই সনদ পাশ করানোর দায়িত্ব সবার।

 

এদিকে এ ধরনের বক্তব্যের ভবিষ্যৎ কী হবে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় সংসদ ভবনে জুলাই সনদ যেভাবে স্বাক্ষর করা হয়েছিল, মঙ্গলবার সেভাবে উপস্থাপন করলে সমস্যাটা হতো না। এখন যেটা উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে নতুন নতুন কয়েকটা বিষয় এসেছে। যেমন- উচ্চকক্ষে আনুপাতিক নির্বাচন, সাংগঠনিক পরিষদ বা গণভোটের ব্যাপার। ফলে এ বিষয়গুলোতে প্রয়োজনে আরও কয়েকদিন লাগলেও দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে উপস্থাপন করলে ভালো হতো। এটা না হওয়ায় ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।

 

তবে এখনো সরকারের কোর্টেই বল আছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশন তার কাজ শেষ করেছে। কিন্তু সরকারের কাছে তো কাজ আছে। সরকার গণভোট বা অন্য বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারে। তাদের বোঝাতে পারে, ঐকমত্যে আনতে পারে। ফলে আমার মনে হয়, আলাপ-আলোচনা করলে এই অনৈক্য কেটে যাবে।

 

সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল যুগান্তরকে বলেন, আগামী নির্বাচনে যেসব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে, ধরেন ১০টি দল অংশ নেবে। তারা সবাই সরকার গঠন করে দেশ চালাতে চায়। তারা কি একইভাবে দেশ চালাবে? ১০টি দলের ১০ ধরনের প্লান আছে? সেই প্লান নিয়ে তারা জনগণের কাছে যাবে। জনগণ যাদের প্লান পছন্দ করবে, তাদের ভোট দেবে। ফলে যদি নতুন সরকার আসে, তারা কিভাবে দেশ চালাবে, সেটা তাদেরই বিষয়। সেটা কি অন্য কেউ ঠিক করে দেবে? কিন্তু এরা (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) বলতেছে, তোমরা যে-ই ক্ষমতায় আসো এভাবে দেশ চালাবে। এখন এগুলো যারা বলছে তারা কি জনগণের প্রতিনিধি? তারা কি এই দেশের জনগণকে সবচেয়ে ভালোবাসে? তারা তো অধিকাংশ দেশেই থাকে না। কতগুলো বিদেশি লোক, ভাড়াটে বুদ্ধিবীজী, আর কতগুলো এনজিও মিলে ঠিক করে দেবে দেশ কিভাবে চলবে? আমাদের দেশে রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলো কি এগুলো মানবে?

 

তিনি আরও বলেন, যারা নিজেরাই দেশ ঠিকমতো চালাতে পারেন না, তারা অন্যদের কীভাবে ঠিক করে দেবেন-দেশ কীভাবে চালাতে হবে। ফলে কেন মানবে? কেউ মানবে না। এতদিন সবাই চুপচাপ সহ্য করে গেছে। সেখানে গেছে, চা-নাশতা, খাওয়াদাওয়া করেছে, আলোচনা করেছে। চলে এসেছে।

 

প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের সহসভাপতি করা হয় অধ্যাপক আলী রীয়াজকে। জানা গেছে, জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে ২০ মার্চ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৬৭টি বৈঠক করেছে কমিশন। দুই পর্বের আলোচনায় ৮২টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো নিয়ে তৈরি করা হয় জুলাই সনদ। গত ১৭ অক্টোবর যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করে। তবে এখনো স্বাক্ষর করেনি এনসিপিসহ আরও চারটি দল। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর থেকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি-সম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা সভা করে কমিশন। বৈঠক করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও। মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেয়। এরপর থেকেই এ নিয়ে সমালোচনায় সরব বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো।

নারী ভোটারদের টানতে জামায়াতের বিশেষ কৌশল

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর , ২০২৫
নারী ভোটারদের টানতে জামায়াতের বিশেষ কৌশল
আরো পড়ুন

জামায়াতের নারী বিভাগের কর্মী ও নেত্রীরাও চালাচ্ছেন ভোটের প্রচারণা। ইসলামি সভার নাম করে বাড়িতে হয় নারীদের জমায়েত। সেই জমায়েতে ধর্মীয় আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে চলে ভোটের প্রচার। প্রচারণার এই কৌশলে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, নারী ভোটাররাই প্রধান টার্গেট জামায়াতে ইসলামীর। এই টার্গেটে বহু আগে থেকেই চলছে কার্যক্রম। ফলে নারীদের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে তাদের ভোট। বিপরীতে পিছিয়ে পড়ছে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো। নারী ভোটারদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী আর আওয়ামী লীগের ভোট বাগাতেও কাজ করছে জামায়াত। ‘ক্ষমতায় বিএনপি এলে এলাকায় থাকা মুশকিল হবে’ বলে বোঝানো হচ্ছে তাদের। একই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে জানমাল রক্ষার প্রতিশ্রুতি। এসব কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জামায়াতের পক্ষে কাজ করছেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। অন্যান্য এলাকায়ও জামায়াতে আস্থা রাখতে শুরু করেছেন নৌকার ভোটাররা।

 

পিরোজপুরের ২টি এবং পটুয়াখালীর ১টি আসনে রয়েছে জামায়াতের শক্ত প্রার্থী। বরিশালের বাকি ১৮টি আসনেও প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। বিএনপি যেখানে ভোটের মাঠে করছে মিছিল-সমাবেশ, সেখানে জামায়াতের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। ব্যানার-পোস্টার তো দূরে, দাঁড়িপাল্লার পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চাওয়াও চোখে পড়ে না। কী করে চলছে তাদের প্রচার, তা-ই খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে পড়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিএনপি যখন রাজপথে মিছিল-সমাবেশে ব্যস্ত, ঠিক তখন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঢুকে পড়ছে জামায়াত। বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের পক্ষে আনতে চলছে প্রাণপণ চেষ্টা। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন জামায়াতের মহিলা বিভাগের কর্মীরা। পুরুষ যখন বাইরে ব্যস্ত কাজে, ঠিক তখন ঘরের নারীদের কাছে গিয়ে ইসলামি সভার দাওয়াত দিচ্ছেন তারা। ৮/১০টি বাড়ির নারীদের নিয়ে হচ্ছে ওই সভাউপস্থিত থাকছেন ৪০-৫০ জন করে নারীঅংশগ্রহণকারী কারও না কারও বাসাতেই হচ্ছে এই আয়োজনসেখানে কুরআন-হাদিস নিয়ে চলছে আলোচনাআয়াত আর সুরার বিশ্লেষণে বোঝানো হচ্ছে ইহকাল-পরকালবাছাই করা সুরার বাংলা অনুবাদে কৌশলে ঢোকানো হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যাখ্যাপরকালে বেহেশত পেতে হলে ইহকালে থাকতে হবে ইসলামের সঙ্গে, বলছেন তারাআর ইহকালের জীবনে যেহেতু রাজনীতি আর নির্বাচনও অন্তর্ভুক্ত, তাই কোথায় ভোট দিতে হবে, তা বলা হচ্ছে আকারে-ইঙ্গিতে

 

বরিশাল নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকার বাসিন্দা এক গৃহকর্তা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় তো বহু বছর ধরে চলছে মহিলাদের এমন সভার আয়োজন। স্থানীয়ভাবে আমরা যাকে জানি তালিম নামে। এসব তালিমে থাকেন কেবল নারীরা। যেহেতু ধর্মীয় বিষয় আর কোনো পুরুষ থাকে না, তাই এ নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি। কিন্তু এখন তো শুনছি এটা নাকি জামায়াতের প্রচারণা।’

 

নগরীর কলেজ অ্যাভিনিউ এলাকার বাসিন্দা এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘কথা প্রসঙ্গে হঠাৎ একদিন আমার স্ত্রী বলে যে এবার ভোট দেবে জামায়াতে। রাজনীতি সম্পর্কে তেমন ধারণা না থাকা স্ত্রীর এমন কথা শুনে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি সে নিয়মিত অংশ নেয় মহিলা জামায়াতের তালিমে। সেখানেই ধর্মীয় আলোচনা শুনে তার বিশ্বাস জন্মেছে যে জামায়াতে ভোট দিলে সওয়াব পাওয়া যাবে।’

 

বরিশাল নগরীর আরও কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে মিলেছে তালিমের নামে জামায়াতের পক্ষে এভাবে নারীদের উদ্বুদ্ধ করার প্রমাণ। কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা মধ্যবয়সি এক এনজিও কর্মী বলেন, ‘এখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও এই তালিম তো চলছে বহু বছর ধরে। নগরীর প্রতিষ্ঠিত বহু মানুষের স্ত্রী-বোন জড়িত আছেন এর সঙ্গে। অন্তত ১২/১৩ বছর আগে থেকে কাউনিয়া এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চলছে এরকম তালিম। মহিলারা একত্রিত হয়ে ধর্ম নিয়ে আলোচনা করে মনে করে মাথা ঘামানো বা বাধা দেননি ঘরের কর্তারা।’

 

পটুয়াখালী-২ নির্বাচনি এলাকা বাউফল উপজেলায় জামায়াতের প্রার্থী হিসাবে আছেন দলের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে প্রতিটি ওয়ার্ডকে ৩/৪ ভাগে ভাগ করে ৪/৫ জনের একেকটি টিম করে দেওয়া হয়। এ টিম প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাড়িতে করে তালিমের আয়োজন। আশপাশের ১০/১২টি বাড়ির নারীরা অংশ নেন তালিমে। মাসজুড়েই চলে তালিমের নামে এভাবে কৌশলী প্রচার। খোদ বিএনপি নেতাদের বাড়িতে পর্যন্ত চলে মহিলা জামায়াতের এই তালিম। পৌর বিএনপির এক নেতার বাড়িতে নিয়মিত এমন তালিম আয়োজনের খবর মিলেছে। ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িও বাদ পড়ে না তালিমের তালিকা থেকে।

 

নাম-পরিচয় না প্রকাশের অনুরোধ করে পৌর বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘মাত্র কদিন আগে বিষয়টি জানতে পেরে আমার বাড়িতে তালিম বন্ধ করেছি। এরা (জামায়াত) যে তৃণমূলের কতটা গভীরে গেছে, তা না দেখলে বিশ্বাস হবে না।’ বরিশাল নগরীতেও বিএনপির অনেক কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে চলে মহিলা জামায়াতের তালিম। স্থানীয় বিএনপির এক নেতার পরিবারের সদস্যরাও জড়িত এই তালিম আয়োজনে। নগরে এমন অন্তত ১৭টি বাড়ির সন্ধান মিলেছে, যেগুলোর কর্তা বিএনপির কর্মী-সমর্থক অথচ তাদের বাড়িতে চলে জামায়াতের তালিম।

 

তালিমের নামে ঘরে ঘরে নারী ভোটার বাড়ানোর পাশাপাশি আরও নানা কৌশলে চলছে জামায়াতের প্রচার। পিরোজপুর-১ (সদর-জিয়ানগর-নাজিরপুর) আসনে জামায়াতের প্রার্থী মরহুম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুম সাঈদী। এখানেও নিত্যনতুন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছে দলটি। জিয়ানগরে জামায়াতের রোকনের সংখ্যা ৯৩। কর্মী-সদস্য মিলিয়ে আছেন আরও ৩০ হাজার। এসব কর্মী-সদস্য-রোকনের ওপর রয়েছে কঠিন নির্দেশনা। প্রতিদিন মাথাপিছু কমপক্ষে ১ জন ভোটারের ভোট নিশ্চিত করতে হবে দাঁড়িপাল্লার পক্ষে। সপ্তাহান্তে দিতে হবে নিশ্চিত ভোটারের তালিকা। শুক্র ও শনিবার দলের ৪০/৫০ জন কর্মী ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রচার চালান বাড়ি বাড়ি। ওয়ার্ডভিত্তিক অন্তত ৪টি মসজিদে আসরের নামাজে দাওয়াত দিয়ে আনা হয় লোকজন। এশা পর্যন্ত চলে ইসলামিক আলোচনা। এর ফাঁকে কৌশলে চালানো হয় ভোটের প্রচার।

 

সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে পিরোজপুর-২ নির্বাচনি এলাকার স্বরূপকাঠি উপজেলায়। এখানে জামায়াতের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাদের মধ্যে রয়েছেন গুয়ারেখা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল লতিফ, ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এসাহাক শেখ, ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য কাউয়ুম শেখ ও আওয়ামী সমর্থক মৌলবি জসিমউদ্দিন। সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের অনেকেও এখন জামায়াতের ছায়াতলে। আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, ‘আমি ওমরাহ করে এসেছি। শেষ জীবনে ইসলামি লাইনে থাকতে চাই। তাই জামায়াতের পক্ষে কাজ করছি।’ পরিচয় না প্রকাশের শর্তে জামায়াতের পক্ষে কাজ করা বেশ কয়েকজন আ.লীগ কর্মী বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছে বিএনপি। দখল, চাঁদাবাজি-এমন কিছু নেই যা তারা করেনি। এখন আবার শুনছি স্বরূপকাঠি থেকে নাকি প্রার্থী দেবে তারা। স্থানীয় কেউ এমপি হলে তো বিএনপির অত্যাচারে এলাকা ছাড়তে হবে। তাই জামায়াতের পক্ষে কাজ করছি।’ এসবের পাশাপাশি ৭/৮ মাস আগে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করেছে জামায়াত। প্রতি কমিটিতে ৯ জন নারীসহ রয়েছেন ১৫০ সদস্য। কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণসহ যে কোনো পরিস্থিতি সামলাতে তাদের দেওয়া হয় নিয়মিত প্রশিক্ষণ। প্রচার-তালিম-ভোটকেন্দ্র

 

দরিদ্র অসহায় মানুষকে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও অবলম্বন করা হচ্ছে গোপনীয়তা। দরিদ্র অনেক পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত মাসিক সহায়তা। জুলাই যুদ্ধে আহত আর শহীদপরিবারগুলো আছে এ তালিকায়। এসব সহযোগিতার বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের পর্যন্ত জানানো হয় না।

 

জামায়াতে ইসলামীর বরিশাল মহানগর আমির জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, ‘১৭ বছর আগে থেকে আমাদের মহিলা বিভাগের এই তালিম চলছে। সেখানে ইসলাম আর কুরআন-হাদিস নিয়ে আলোচনা করেন নারীরা।’ এসব তালিমে ভোটের প্রচার হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কিংবা ভোট কি ইসলামের বাইরে? জীবনবিধানের সবকিছুই তো ইসলামের অন্তর্গত। আমরা যেহেতু একটি রাজনৈতিক দল, তাই আমাদের তালিমে ইসলামের পাশাপাশি ভোটের প্রচার চলবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। তবে মসজিদ ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রচারণার যে অভিযোগ, তা সঠিক না। আমরা মসজিদকে ব্যবহার করে কখনোই রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করি না।’

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’, ভারতের ৩ রাজ্যে সতর্কতা

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর , ২০২৫
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’, ভারতের ৩ রাজ্যে সতর্কতা
আরো পড়ুন

বঙ্গোপসাগরে উদ্ভূত ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ ক্রমশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের (আইএমডি) সর্বশেষ বুলেটিন অনুসারে, শেষ ছয় ঘণ্টায় দক্ষিণ-পশ্চিম এবং সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার গতিতে স্থলভাগের দিকে এগোচ্ছে ‘মন্থা’।

 

আইএমডি বুলেটিনের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রের কাকিনাড়া এবং কলিঙ্গপত্তনম উপকূলের মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে পড়বে মোন্থা।

 

আইএমডির সর্বশেষ বুলেটিন দেওয়া হয়েছে সোমবার রাত ৯ টার দিকে। সেখানে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকালের মধ্যে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হবে। ‘প্রবল’ আকারেই মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম এবং কাকিনাড়ার কাছে কলিঙ্গপত্তনম উপকূলের মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে পড়বে। এ সময় ওই অঞ্চলে বাতাসের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার বেগ ছুঁতে পারে ১১০ কিলোমিটারের গণ্ডিও।

 

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় দুই রাজ্য তামিলনাড়ু, অন্ধ্র এবং পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশায় ইতিমধ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উপকূল থেকে সরানো হয়েছে লোকজনকে। ওই তিন রাজ্যে মঙ্গলবার বন্ধ থাকছে স্কুল। বাতিল করা হয়েছে বেশ কিছু ট্রেন।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কমিশনের সুপারিশ জমা আজ

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর , ২০২৫
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কমিশনের সুপারিশ জমা আজ
আরো পড়ুন

সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ দিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই সুপারিশ হস্তান্তর করা হবে।

 

এর আগে সোমবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয় কমিশনের সমাপনী বৈঠক। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

 

এতে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ সহ ৬ সদস্য ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। অন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশন সদস্যরা।

 

এসময়, কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রদান পর্যন্ত সমস্ত ডকুমেন্ট, আলোচনার ভিডিও, অডিও, ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

 

গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এতে বিএনপি-জামায়াতসহ প্রথম ধাপে ২৪টি রাজনৈতিকদল ও জোট এতে স্বাক্ষর করেন। এর ২ দিন পরে জাতীয় জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে গণফোরাম।

 

তবে এখনও সই করেনি এনসিপিসহ কয়েকটি বাম দল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক বসে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি।

 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য কাজ করেছে- উল্লেখ করে কমিশন সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।’