রোববার, ০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

‘জেন-জি’ নিয়ে চমক দেখাবে বিএনপি, মনোনয়ন পেতে পারেন যারা

প্রকাশ: শুক্রবার, ২৬ সেপ্টেম্বর , ২০২৫
‘জেন-জি’ নিয়ে চমক দেখাবে বিএনপি, মনোনয়ন পেতে পারেন যারা
আরো পড়ুন

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য জোরেশোরে কাজ শুরু করেছে বিএনপি। দলীয় প্রার্থী বাছাইয়ের দিকেও মনোযোগ দিয়েছে দলটি। অক্টোবর মাসের মধ্যে প্রার্থীদের প্রাথমিক তালিকা চূড়ান্ত করতে চায় দেশের অন্যতম বৃহৎ এই দল। এ লক্ষ্যে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নানাভাবে কাজ করছেন। 

দলীয় প্রার্থী ঠিক করার পাশাপাশি সমমনা ও যুগপৎ আন্দোলনের শরিকদের আসন ছাড় ও মনোনয়নের বিষয়টিও দ্রুত সুরাহা করতে চাইছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকেরা। এ ক্ষেত্রে বেশি সময় নেওয়া হলে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ সুযোগ নিতে পারে বলে মনে করছেন বিএনপির নেতারা। 

এবারের সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে একক প্রার্থী চূড়ান্তে তৎপর বিএনপি। নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে প্রার্থী মনোনয়ন দেবে দলটি। তবে আসন্ন নির্বাচনে তরুণ প্রজন্ম, বিশেষ করে জেন-জির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে। সেজন্য প্রার্থী মনোনয়নে তাদের মনোভাবের কথা আমলে নিতে হবে।

এবার দেশের মোট ভোটারের প্রায় এক-তৃতীয়াংশই তরুণ। তাদের ভোট টানতে ইতোমধ্যে নানা পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে বিএনপি। এরই অংশ হিসাবে প্রার্থী মনোনয়নে অপেক্ষাকৃত তারুণ্যকে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়টি বিশেষভাবে দেখা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে সাবেক ছাত্র ও যুব নেতারা এগিয়ে আছেন।

নিজ এলাকায় জনপ্রিয়তা, দলের জন্য ত্যাগ, বিগত দিনের ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা, দুঃসময়ে নেতা-কর্মীদের পাশে থাকা ও সাংগঠনিক দক্ষতা-এসব মানদণ্ড যাচাই করে প্রার্থী বাছাইপ্রক্রিয়াও প্রায় শেষ পর্যায়ে।

এ বাস্তবতা বিবেচনায় তরুণ প্রার্থীদের গুরুত্ব দেওয়া হবে। মূলত সে কারণেই মনোনয়নে চমক হতে পারেন ‘যোগ্য’ তরুণরা। এরই মধ্যে নিজ নিজ নির্বাচনি এলাকায় এ ধরনের শতাধিক নেতা গণসংযোগ শুরু করেছেন। পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন লাভে তারা কেন্দ্রেও দৌড়ঝাঁপ করছেন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এসব তথ্য।

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্প্রতি যুগান্তরকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, মনোনয়নের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। মানদণ্ড হবে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, নির্বাচন করার ক্ষমতা ও সাংগঠনিক দক্ষতা, জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্যতা এবং বিগত আন্দোলনে তার অংশগ্রহণ কেমন ছিল।

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু বৃহস্পতিবার যুগান্তরকে বলেন, কোনো রাজনীতিতে প্রবীণ ও নবীনের সংমিশ্রণ ছাড়া চলে না। আমরা তরুণদের কথা বলছি , কিন্তু একেবারে যে প্রবীণদের বাদ দেওয়া হবে, এমন নয়। আমরা সেটা কখনো বলিনি। এখানে নবীন এবং প্রবীণের সংমিশ্রণে প্রার্থী দেওয়া হবে। জনগণের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে এবং ভোট টানতে পারবে- তাদের মনোনয়ন দেওয়া হবে।

বিএনপি নেতারা জানান, এবারের ভোটে জেন-জিসহ নতুন ভোটারদের মানসিকতা বুঝে প্রার্থী ঠিক করা হবে। সে অনুযায়ী প্রার্থী দিতে হবে। অন্যথায় ভোটের মাঠে প্রত্যাশিত ফলাফলে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে। ফলে প্রার্থী বাছাইয়ে তারুণ্যের প্রাধান্য থাকবে।

অপেক্ষাকৃত তরুণ অন্তত শতাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী ইতোমধ্যে নির্বাচনি মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেনদলের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, ক্রীড়া সম্পাদক আমিনুল হক, সহ সাংগঠনিক সম্পদক ব্যারিস্টার মীর হেলাল, আন্তর্জাতিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন অসীম, ইশরাক হোসেন, নিপুন রায় চৌধুরী, আবদুল কাদির ভূইয়া, রকিবুল ইসলাম বকুল, খোন্দকার আকবর হোসেন ডাবলু, সাঈদ আল নোমান, ইসরাফিল খসরু, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, রাজিব আহসান, আকরামুল হাসান, বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, মনজুরুল করিম রনি, আনোয়ার আলদীন, খন্দকার মারুফ হোসেন, সাইদুর রহমান, মির্জা ইয়াসিন আলী, প্রমুখ। 

ঢাকা বিভাগ: ঢাকা-৩ আসনে নিপুন রায় চৌধুরী, ঢাকা-৪ আসনে তানভীর আহমেদ রবিন, ঢাকা-৬ আসনে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন, ঢাকা-৭ আসনে ইসহাক সরকার ও হামিদুর রহমান হামিদ, ঢাকা-১০ আসনে ব্যারিস্টার নাসির উদ্দিন আহমেদ অসীম ও শেখ রবিউল আলম, ঢাকা-১৫ আসনে মামুন হাসান, ঢাকা-১৬ আসনে আমিনুল হক, ঢাকা-১৮ আসনে এস এম জাহাঙ্গীর হোসেনের নাম আলোচনায় রয়েছে।

এছাড়া গাজীপুর-১ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল, গাজীপুর-২ আসনে গাজীপুরের সাবেক মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নানের ছেলে এম মঞ্জুরুল করিম রনি, গাজীপুর-৫ আসনে জেলার আহ্বায়ক ফজলুল হক মিলন, মুন্সীগঞ্জ-২ আসনে আব্দুস সালাম আজাদ, মানিকগঞ্জ-১ আসনে প্রয়াত মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে খোন্দকার আকবর হোসেন বাবলু, নারায়ণগঞ্জ-২ আসনে নজরুল ইসলাম আজাদ ও মাহমুদুর রহমান সুমন, নারায়ণগঞ্জ-৩ আসনে আজহারুল ইসলাম মান্নান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে মশিউর রহমান রনি, নরসিংদী-১ আসনে দলের যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, নরসিংদী-৩ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, নরসিংদী-৪ আসনে আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, নরসিংদী-৫ আসনে ইঞ্জিনিয়ার আশরাফ উদ্দিন বকুল ও ইকবাল হোসেন শ্যামল, কিশোরগঞ্জ-৪ আসনে ডা. ফেরদৌস আহমেদ চৌধুরী লাকি, কিশোরগঞ্জ- ৬ আসনে মো. শরীফুল আলম, টাঙ্গাইল-১ আসনে জোবাইর আল মাহমুদ রিজভী, টাঙ্গাইল-৩ আসনে মো. মাইনুল ইসলাম ও ওবায়দুল হক নাসির, টাঙ্গাইল-৫ আসনে সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, টাঙ্গাইল-৬ আসনে রবিউল আওয়াল লাভলু, টাঙ্গাইল-৭ আসনে জেলা কৃষকদলের সভাপতি দিপু হায়দার খানও আলোচনায় রয়েছেন।

এছাড়া কুড়িগ্রাম, বগুড়া অথবা ঢাকার যে কোনো একটি আসন থেকে মনোনয়ন পেতে পারেন রুহুল কবির রিজভী।

সিলেট বিভাগ : সিলেট-২ আসনে হুমায়ুন কবির, সিলেট-৪ আসনে মিফতাহ সিদ্দিকী, সিলেট-৫ আসনে আশিক উদ্দিন চৌধুরী ও ফাহিম আল চৌধুরী এবং সিলেট-৬ আসনে ড. এনামুল হক চৌধুরী ও এমরান আহমদ চৌধুরীর নাম স্থানীয়দের মধ্যে ব্যাপকভাবে আলোচনায় আছে। হবিগঞ্জ-১ আসনে তালহা চৌধুরী ও শেখ সুজাত মিয়া, হবিগঞ্জ-২ আসনে আহমেদ আলী মুকিব, হবিগঞ্জ-৪ আসনে শাম্মী আক্তার শিপা, মৌলভীবাজার-১ আসনে শরিফুল হক সাজু, মৌলভীবাজার-২ আসনে বদরুল আলম চৌধুরী শিপলু, সুনামগঞ্জ-১ আসনে মাহবুবুর রহমান ও কামরুজ্জামান কামরুল, সুনামগঞ্জ-৩ আসনে এমএ সাত্তার ও কয়ছর এম আহমেদ, সুনামগঞ্জ-৪ আসনে দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন ও নুরুল হক নুরুলের নামও রয়েছে আলোচনায়।

চট্টগ্রাম বিভাগ: চট্টগ্রাম-২ আসনে সাংবাদিক কাদের গনি চৌধুরী, চট্টগ্রাম-৫ আসনে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর নাসিরের ছেলে ব্যারিস্টার মীর হেলাল, চট্টগ্রাম-৭ আসনে প্রয়াত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছেলে হুম্মাম কাদের চৌধুরী, চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রয়াত আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান, চট্টগ্রাম-১১ আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরুর ছেলে ইসরাফিল খসরু, চট্টগ্রাম-১২ আসনে সৈয়দ সাদাত আহমেদ, চট্টগ্রাম-১৬ আসনে মিসকাতুল চৌধুরী পাপ্পু ও চট্টগ্রাম-৩ আসনে রফি উদ্দিন ফয়সাল ও মিজানুর রহমান ভূঁইয়া মিল্টনের নাম সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে আলোচনায় আছে। ফেনী-১ আসনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক রফিকুল আলম মজনু, কক্সবাজার-৩ আসনে রাশেদুল হক রাসেল ও ফাহিমুর রহমান ফাহিম, কক্সবাজার-৪ আসনে মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, লক্ষ্মীপুর-১ আসনে আবু নাছের শেখ, লক্ষ্মীপুর-৩ আসনে শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নোয়াখালী-১ আসনে ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন ও মামুনুর রশিদ মামুন, নোয়াখালী-৫ আসনে বজলুল করিম চৌধুরী আবেদ, নোয়াখালী-৬ আসনে মাহবুবর রহমান শামীমের নাম এলাকার জনগণের মুখে মুখে ফিরছে।

খুলনা বিভাগ : খুলনায় এবার আগেভাগে মাঠে নেমেছেন সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীরা। খুলনা-১ আসনে নজরুল ইসলাম পাপুল, খুলনা-৩ আসনে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল, খুলনা-৪ আসনে দলের তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল, খুলনা-৬ আসনে সাংবাদিক আনোয়ার আলদীনের নাম জোরালো আলোচনায় রয়েছে। 

বাগেরহাট-৪ আসনে বিএনপির ড. এবিএম ওবায়দুল ইসলাম, বাগেরহাট-৩ আসনে কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, বাগেরহাট-২ আসনে শেখ ফরিদুল ইসলাম, কুষ্টিয়া-১ আসনে শরীফ উদ্দিন জুয়েল, কুষ্টিয়া-২ আসনে অধ্যাপক ড. সাইফুল ইসলাম, মাগুরা-২ আসনে রবিউল ইসলাম নয়ন, মাগুরা-১ আসনে আলী আহম্মেদ, ঝিনাইদহ-২ আসনে ইব্রাহিম রহমান বাবু ও আসাদুজ্জামান আসাদ, ঝিনাইদহ-৩ আসনে আমিরুজ্জামান খান শিমুল, ঝিনাইদহ-৪ আসনে সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, মেহেরপুর-১ আসনে কামরুল ইসলাম, নড়াইল-২ আসনে মনিরুল ইসলাম, সাতক্ষীরা-৪ আসনে আমিনুর রহমান আমিন, চুয়াডাঙ্গা-২ আসনে মাহমুদ হাসান খান, যশোর-১ আসনে হাসান জহির, যশোর-২ আসনে সাবিরা নাজমুল মুন্নি, যশোর-৩ আসনে প্রয়াত স্থায়ী কমিটির সদস্য তরিকুল ইসলামের ছেলে অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, যশোর-৫ আসনে মোহাম্মদ মুছা ও যশোর-৬ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ, যশোর-৫ আসনে মোহাম্মদ মুছা ও যশোর-৬ আসনে কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণের নাম উঠে এসেছে।।

বরিশাল বিভাগ : বরিশাল বিভাগে প্রবীণ-নবীন দুটোর ওপরই আস্থা রাখতে পারে বিএনপি। বরিশাল-১ আসনে জহির উদ্দিন স্বপন ও আকন কুদ্দুসুর রহমান, বরিশাল-৪ আসনে স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, বরিশাল-২ আসনে দুলাল হোসেন ও সাইফ মাহমুদ জুয়েল, বরিশাল-৫ আসনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ও আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ নির্বাচনি প্রস্তুতি নিয়েছেন। ভোলা-৪ আসন থেকে নুরুল ইসলাম নয়ন, ভোলা-১ আসনে গোলাম নবী আলমগীর, হায়দার আলী লেলিন, পটুয়াখালী-২ আসনে মুহাম্মদ মুনির হোসেন, পটুয়াখালী-৩ আসনে হাসান মামুন, পটুয়াখালী-৪ আসনে এবিএম মোশাররফ হোসেন, পিরোজপুর-১ আসনে অধ্যক্ষ আলমগীর হোসেন ও হাফিজ আল আসাদ (সাঈদ খান), পিরোজপুর-৩ আসনে এআর মামুন খান এবং ঝালকাঠি-২ আসনে মাহবুবুল হক নান্নু ইতোমধ্যে নির্বাচনি প্রচারণা শুরু করেছেন।

কুমিল্লা বিভাগ (সাংগঠনিক) : কুমিল্লা-২ আসনে অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়া, কুমিল্লা-৪ আসনে এফএম তারেক মুন্সী, কুমিল্লা-৫ আসনে হাজি জসিম উদ্দিন ও এটিএম মিজানুর রহমান, কুমিল্লা-৯ আসনে আবুল কালাম আলোচনায় রয়েছেন। এ ছাড়া কুমিল্লার যে কোনো আসন থেকে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ছেলে ড. খন্দকার মারুফ হোসেনকে নির্বাচনে মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। সম্ভাব্য এসব প্রার্থী মনোনয়ন পেতে যে যার মতো করে কেন্দ্রেও যোগাযোগ বাড়িয়েছেন।

এই বিভাগের চাঁদপুর-২ আসনে ডা. সরকার মাহবুব আহমেদ শামীম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনে ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে নাজমুল হুদা খন্দকার ও আহমেদ ভূঁইয়ার নাম আলোচনায় রয়েছে। রাজশাহী বিভাগ : তরুণদের নিয়ে আলোচনা থেমে নেই রাজশাহী বিভাগেও। এ বিভাগে দলীয় মনোনয়ন পেতে লবিং-তদবিরের পাশাপাশি গণসংযোগ চালাচ্ছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। রাজশাহী-২ আসনে অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশা, রাজশাহী-৩ আসনে শফিকুল হক মিলন ও রায়হানুল আলম রায়হান, রাজশাহী-৪ আসনে অধ্যাপক কামাল হোসেন, রাজশাহী-৫ আসনে মাহমুদা হাবীবা, আবু বকর সিদ্দিক ও গোলাম মোস্তফা এবং রাজশাহী-৬ আসনে আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বলের নাম উঠে এসেছে। এই বিভাগের সিরাজগঞ্জ-৫ আসনে আমিরুল ইসলাম খান আলীম, নাটোর-১ আসনে তাইফুল ইসলাম টিপু, ডা. ইয়াসির আরাফাত রাজন ও ফারজানা শারমিন পুতুল, নাটোর-২ আসনে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, বগুড়া-৫ আসনে ফজলুর রহমান খোকন, জয়পুরহাট-২ আসনে প্রকৌশলী আমিনুর ইসলাম, সিরাজগঞ্জ-৬ আসনে গোলাম সারওয়ার, সিরাজগঞ্জ-৩ আসনে মো. রকিবুল করিম খান পাপ্পু। পাবনা-৩ আসনে কৃষিবিদ হাসান জাফির তুহিন, পাবনা-৫ আসনে অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস আলোচনায় রয়েছেন।

ময়মনসিংহ বিভাগ : আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ময়মনসিংহ-১ আসনে সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, ময়মনসিংহ-২ আসনে মোতাহার হোসেন তালুকদার, ময়মনসিংহ-৩ আসনে আহাম্মদ তায়েবুর রহমান হিরণ, ময়মনসিংহ-৬ আসনে তানভীর হোসেন রানা, ময়মনসিংহ-৯ আসনে মো. মামুন বিন আব্দুল মান্নান, ময়মনসিংহ-১১ আসনে মুহাম্মদ মোর্শেদ আলম। এ ছাড়া বিভাগের জামালপুর-১ আসনে রশিদুজ্জামান মিল্লাত, জামালপুর-৪ আসনে ব্যারিস্টার সালিমা বেগম আরুণি, জামালপুর-৩ আসনে মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নেত্রকোনা-৩ আসনে মো. মোস্তাফা-ই জামান সেলিম, নেত্রকোনা-২ আসনে অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল হক, নেত্রকোনা-৫ আসনে শহীদুল্লাহ ইমরান এবং নেত্রকোনা-১ আসনে ব্যারিস্টার কায়সার কামাল আলোচনায় রয়েছেন।

রংপুর বিভাগ : রংপুর বিভাগে মনোনয়ন দৌড়ে আলোচনায় রয়েছেন রংপুর-১ আসনে ওয়াহেদুজ্জামান মাবু, রংপুর-২ আসনে মাহফুজ উন নবী ডন ও অ্যাডভোকেট গোলাম রসুল বকুল, রংপুর-৩ আসনে শামসুজ্জামান সামু ও আনিসুর রহমান লাকু, রংপুর-৪ আসনে আফসার আলী, রংপুর-৫ আসনে ডা. জহিরুল ইসলাম। ঠাকুরগাঁও-২ আসনে মির্জা ফয়সাল আমিন, ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে আব্দুল ওয়াদুদ নূর আলিফ, দিনাজপুর-১ আসনে মনজুরুল ইসলাম মঞ্জু, দিনাজপুর-২ আসনে মামুনুর রশিদ কালু ও অ্যাডভোকেট আবদুল আজিজ, দিনাজপুর-৫ আসনে ব্যারিস্টার কামরুজ্জামান, নীলফামারী-৪ আসনে বেবী নাজনীন, কুড়িগ্রাম-১ আসনে ডা. মো. ইউনুছ আলী, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে মমতাজ বেগম লিপি, গাইবান্ধা-১ আসনে অধ্যাপক ডা. জিয়াউল ইসলাম, গাইবান্ধা-২ আসনে মাহমুদুন নবী টিটুল, গাইবান্ধা-৩ আসনে রফিকুল ইসলাম রফিক, গাইবান্ধা-৪ আসনে অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম এবং পঞ্চগড়-১ আসনে ব্যারিস্টার নওশাদ জমির, পঞ্চগড়-২ আসনে ফরহাদ হোসেন আজাদ।

ফরিদপুর বিভাগ (সাংগঠনিক) : ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ, ফরিদপুর-৪ আসনে শহিদুল ইসলাম বাবুল, ফরিদপুর-৩ আসনে চৌধুরী নায়াব ইউসুফ, মাহবুবুল হাসান পিংকু ও সৈয়দ মোদাররেছ আলী, মাদারীপুর-১ আসনে ইয়াজ্জেম হোসেন রোমান, মাদারীপুর-২ আসনে মিল্টন বৈদ্য, মাদারীপুর-৩ আসনে আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন, শরীয়তপুর-৩ মিয়া নুরুদ্দিন অপু, গোপালগঞ্জ-১ আসনে সেলিমুজ্জামান সেলিম, গোপালগঞ্জ-২ আসনে সরদার মো. নুরুজ্জামান, গোপালগঞ্জ-৩ আসনে এসএম জিলানীর নির্বাচনী প্রস্তুতি রয়েছে।

কৃষি কর্মকর্তাকে মারধর করে ভাইরাল সেই ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ০৬ নভেম্বর , ২০২৫
কৃষি কর্মকর্তাকে মারধর করে ভাইরাল সেই ছাত্রদল নেতা বহিষ্কার
আরো পড়ুন

নিজের পছন্দের ব্যক্তিদের কৃষি প্রণোদনার তালিকায় নাম না দেওয়ায় কার্যালয়ে ঢুকে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাকে মারধর ও হেনস্তা করার অভিযোগে শেরপুরের নকলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব রাহাত হাসান কাইয়ুমকে বহিষ্কার করা হয়েছে। 

 

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের দপ্তর সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমের সই করা বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

 

বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির এ সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছেন। এতে রাহাত হাসানকে প্রাথমিক সদস্য পদসহ সব সাংগঠনিক পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

 

এর আগে, বুধবার শেরপুরের নকলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শাহারিয়ার মুরসালিন মেহেদীকে তার অফিস কক্ষে মারধর ও হেনস্তা করেন নকলা উপজেলা ছাত্রদল নেতা রাহাত হাসান কাইয়ুম। যার একটি সিসিটিভি ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

 

এদিকে ঘটনার দিন রাতেই নকলা থানায় একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করা হয়। মামলায় ছাত্রদল নেতা রাহাত হাসান কাইয়ুম ও সহযোগী ফজলুকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত রাহাত হাসান কাইয়ুম নকলা পৌরসভার ধুকুরিয়া গ্রামের সুরুজ মাওলা এবং ফজলু একই গ্রামের সিরাজুল হকের ছেলে।

 

জানা যায়, বুধবার বেলা সোয়া ২টার দিকে রাহাত ও ফজলু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয়ে ঢুকে জানতে চান, কৃষি কর্মকর্তা কেন এখনো বদলি হচ্ছেন না? কারা কৃষি প্রণোদনা পেয়েছেন এবং নেতাদের ভাগ কত? এরপর তারা ছাত্রদলের ভাগ দাবি করেন।

 

এ সময় কৃষি কর্মকর্তা জানান, সরকারি প্রণোদনা প্রকৃত কৃষকদের জন্য। রাজনৈতিকভাবে কারও ভাগ দেওয়ার সুযোগ নেই। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন।

 

 

কৃষি কর্মকর্তা তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি স্থানীয় বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির সভাপতি খোরশেদ আলমকে জানালে রাহাত আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন এবং সহযোগী ফজলুকে নিয়ে অফিসের ভেতরেই কর্মকর্তাকে মারধর শুরু করেন।

 

এ ঘটনায় কেন্দ্রীয় ছাত্রদল বৃহস্পতিবার তাকে দল থেকে বহিষ্কারাদেশ দিয়েছে।

 

এদিকে, কৃষি কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় নিয়মিত মামলা গ্রহণ করে আসামিদের গ্রেফতারে অভিযান চলছে বলে জানিয়েছেন নকলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কাশেম।

ঐকমত্য কমিশনের সুপারিশ নিয়ে চরম মতবিরোধ

জটিল সমীকরণে রাজনীতি

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর , ২০২৫
জটিল সমীকরণে রাজনীতি
আরো পড়ুন

নানা কারণে ফের জটিল সমীকরণে দেশের রাজনীতি। বিশেষ করে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ নিয়ে এখন দলগুলোর মধ্যে চরম মতবিরোধ দেখা দিয়েছে। নোট অব ডিসেন্ট সুপারিশে লিপিবদ্ধ না করা ও গণভোটের সময় নিয়ে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপির মধ্যে এই বিভক্তি প্রবল হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা আদেশ দেবেন কোন ক্ষমতাবলে-তা নিয়েও বেশ কয়েকটি দল প্রশ্ন তুলেছে। এছাড়া কমিশনের আরও কিছু জায়গায় অস্পষ্টতা চিহ্নিত করে তা সংশোধন করার আহ্বান জানিয়েছে কয়েকটি দল। এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দীর্ঘ সাড়ে ৮ মাসের কর্মকাণ্ডের ফলাফল কী-তা নিয়ে হিসাব মেলাতে পারছে না রাজনৈতিক মহল। 

 

 

বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বেশ লম্বা সময় নিয়ে পরিশ্রমসাধ্য একটি জার্নির পর ঐকমত্য কমিশন অবশেষে কাজ শেষ করেছে। কিন্তু কমিশন যেভাবে তাদের সুপারিশ দিয়েছে, তাতে ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার’ এ কথাটি আর বলা যাচ্ছে না। বরং কমিশনের এতদিনের কাজকে অর্থহীন বলে প্রমাণ করার ঝুঁকি তৈরি করেছে। এছাড়া সৃষ্ট জটিল অবস্থার আশু সমাধান না হলে দেশ অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে চলে যেতে পারে। এমনকি নির্বাচন নিয়েও এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে।

 

তারা বলেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে হাতে সময় বাকি আছে সর্বোচ্চ সাড়ে তিন মাস। সরকার এমনিতেই নানা সংকটে আছে। দেশের অর্থনীতি ভালো চলছে না, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যথেষ্ট নাজুক। এর মধ্যেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভেদ, দ্বন্দ্ব বাড়ছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়নের যে পদ্ধতি প্রস্তাবিত হয়েছে, সেটা গ্রহণ করা কোনোক্রমে উচিত হবে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের। রাজনৈতিক দলগুলোকেও একে অন্যকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা থাকতে হবে। এমন পরিস্থিতিকে ধৈর্যের সঙ্গে মোকাবিলা করতে হবে। কারণ ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর বিভেদের সুযোগ নেওয়ার জন্য পতিত আওয়ামী লীগ ওতপেতে বসে আছে।

 

এ অবস্থায় সরকারের শীর্ষ পর্যায়সহ গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক দলগুলোর নীতিনির্ধারক মহলের নানান বক্তব্য ও মন্তব্যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে নতুন করে জটিল এক সমীকরণ তৈরি হয়েছে। প্রতিদিন দলগুলোর নানামুখী বক্তব্যের মধ্য দিয়ে শুধু সংকট ঘনীভূত হচ্ছে। সমাধান মিলছে না। আবার সরকারের তরফ থেকেও নানান শঙ্কার কথা জনমনে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা তৈরি করছে।

 

ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বুধবার প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে যমুনায় প্রথম সমন্বয় সভা হয়। এতে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে নির্বাচন বানচালের চেষ্টা হবে। নির্বাচন বানচালের জন্য ভেতর থেকে, বাইরে থেকে অনেক শক্তি কাজ করবে। ছোটখাটো নয়, বড় শক্তি নিয়ে বানচালের চেষ্টা করবে। হঠাৎ করে আক্রমণ চলে আসতে পারে। এই নির্বাচন চ্যালেঞ্জিং হবে। যত ঝড়-ঝঞ্ঝাই আসুক না কেন, আমাদের সেটা অতিক্রম করতে হবে।’

 

এর আগে মঙ্গলবার সচিবালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জাতীয় ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার বদলে জাতীয় অনৈক্য প্রতিষ্ঠার একটা প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, যে জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করেছে, সেই স্বাক্ষরিত সনদবহির্ভূত অনেক পরামর্শ বা সুপারিশ ও সনদ বাস্তবায়নের আদেশের খসড়ায় যুক্ত করা হয়েছে।

 

বুধবার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, যে বিষয়গুলোতে তারা একমত ছিলেন না, সেখানে তারা নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছিলেন। সেই নোট অব ডিসেন্ট সুপারিশে লিপিবদ্ধ করার একটা প্রতিশ্রুতি ছিল কমিশনের। কিন্তু অবাক হয়ে তারা লক্ষ করলেন, সুপারিশে সেই বিষয়গুলো নেই। নোট অব ডিসেন্টগুলো পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এটা তো ঐক্য হতে পারে না। তাহলে ঐকমত্য কমিশনটা করা হয়েছিল কেন? তিনি বলেন, জনগণের সঙ্গে এটা একটা প্রতারণা। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এটা প্রতারণা।

 

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এত বড় একটা অভ্যুত্থান, এত ত্যাগের বিনিময়ে, এত প্রাণের বিনিময়ে সেটাকে ঠিকভাবে জাতির কল্যাণে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেখা যাচ্ছে, যতই দিন যাচ্ছে, ততই বিভক্তি বাড়ছে। বিভক্ত হয়ে পড়াটা, এটা কারা করছেন, কেন করছেন, এটাও উপলব্ধি করতে হবে। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বুধবার জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক ব্রিফিংয়ে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঠিক সময়ে হবে। তবে নির্বাচন কোনো কারণে পিছিয়ে গেলেও জুলাই সনদের বাস্তবায়ন যেন না পেছায়, সেজন্য আগে গণভোট করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।

 

বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে গণভোটের তারিখ ঘোষণার দাবি জানিয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, গণভোটের তারিখ ঘোষণায় যত দেরি হবে, জাতীয় নির্বাচন তত সংকটের মধ্যে পড়বে। বুধবার রংপুরে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, দেশে নানামুখী সংকট তৈরি হয়েছে। পতিত স্বৈরাচারী শক্তি ষড়যন্ত্র করছে। নানামুখী সংকটের জন্য আমাদের জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। আমাদের দলগুলোর মধ্যে যে সমস্যা রয়েছে, সেগুলো সমাধান করে এক জায়গায় থাকতে হবে। কেউ যদি মনে করে এককভাবে সব নেতৃত্ব দেবে, সরকার গঠন করে ফেলবে, এটি আসলে সম্ভব হবে না। দেশে সব পক্ষের মধ্যে ন্যূনতম ঐক্য না থাকলে এককভাবে সরকার গঠন ও সংসদ টিকিয়ে রাখা কারও পক্ষে সম্ভব হবে না। জনগণের ন্যূনতম আকাঙ্ক্ষা, সংস্কার, বিচারের দাবিকে উপেক্ষা করে নির্বাচনের দিকে যাওয়া হলে সেটি টেকসই হবে না।

 

একই দিন ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, কমিশনের প্রস্তাবিত প্রস্তাব-২-এর বিষয়ে কোনো স্পষ্ট বক্তব্য নেই। এর ফলে গোটা সংস্কার কার্যক্রমই ভন্ডুল হয়ে যেতে পারে। প্রস্তাব-১ এর ক্ষেত্রে কিছু জায়গায় অস্পষ্টতা চিহ্নিত করে তা সংশোধন করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে, ‘আগামী নির্বাচিত সভা সংবিধান সংস্কার বিষয়ে সাংগঠনিক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারবে’-এ স্থানে ‘করতে পারবে’ এর স্থলে ‘করবে’ লিখতে হবে এবং সংবিধান সংস্কার বিলের বিষয় ‘বিবেচনা করবে’-এ অস্পষ্টতাও দূর করতে হবে। গণভোটে প্রদত্ত সংবিধান সংস্কার বিলের খসড়া দ্রুত প্রণয়ন এবং জনগণের কাছে উন্মুক্ত করতে সরকারকে আহ্বানও জানান তিনি।

 

গণতন্ত্র মঞ্চের শীর্ষ নেতা গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি যুগান্তরকে বলেন, হঠাৎ করে মঙ্গলবার কমিশন সুপারিশ করেছেন, সেখানে নোট অব ডিসেন্টের উল্লেখ নেই। এটা তো কোনো ঐকমত্য হয়নি। এ প্রশ্নের ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই কমিশন দেবে। তারা জুলাই সনদ সই করেছেন। সনদে নোট অব ডিসেন্ট (আপত্তি) লেখা আছে। এটা দলগুলো নিজ নিজ ইশতেহারে দেবে। যে দল সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাবে, ম্যান্ডেট পাবে, সেই দল নিজস্ব প্রস্তাব অনুযায়ী আপত্তির অংশগুলো মীমাংসা করবে।

 

জুলাই সনদের আদেশ জারি প্রসঙ্গে জোনায়েদ সাকি বলেন, অনেকে দাবি তুলছেন-আদেশ দেবেন প্রধান উপদেষ্টা। প্রধান উপদেষ্টা আদেশ দেবেন কোন ক্ষমতাবলে? সরকার আদেশ দেয়, সেটা রাষ্ট্রপতির নামে যায়, এটা যে কোনো রাষ্ট্রের নিয়ম। রাষ্ট্রপতি হচ্ছেন রাষ্ট্রের প্রতীক। যদি প্রধান উপদেষ্টা নিজে এটা জারি করেন, তার মানে তিনি নিজেকে রাষ্ট্রের প্রধান হিসাবে ঘোষণা করছেন এবং কার্যত সংবিধানকে স্থগিত করছেন। ঐকমত্য ছাড়া কেউ কারও সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিলে তা কার্যকর হবে না। এটা সবার উপলব্ধি করা দরকার।

 

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমেদ যুগান্তরকে বলেন, খসড়ায় আদেশ কে দেবে তা স্পষ্ট করা হয়নি। আদেশ জারির কারণ হিসাবে, ‘জনগণের জ্ঞাতার্থে ও সাংবিধানিক পরিষদের দায়িত্ব সম্পাদনের সুবিধার্থে’-উল্লেখ করা হয়েছে। এর অর্থ হলো-এই আদেশের কোনো বাধ্যবাধকতা থাকছে না। অবশ্য এই খসড়ার শুরুতেই গণ-অভ্যুত্থানের সার্বভৌম ক্ষমতা আছে বলে স্বীকার করা হয়েছে, কিন্তু জনতার অভিপ্রায়ের কোনো প্রয়োগ এই খসড়ায় দেখা যাচ্ছে না।

 

এদিকে বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বলেন, জুলাইয়ে যারা প্রাণ দিয়েছেন, রক্ত দিয়েছেন, তাদের সবার আত্মত্যাগ ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি গণভোটে জুলাই সনদ পাশ না হয়। এজন্য জুলাই সনদ পাশ করানোর দায়িত্ব সবার।

 

এদিকে এ ধরনের বক্তব্যের ভবিষ্যৎ কী হবে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কাজী মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, জাতীয় সংসদ ভবনে জুলাই সনদ যেভাবে স্বাক্ষর করা হয়েছিল, মঙ্গলবার সেভাবে উপস্থাপন করলে সমস্যাটা হতো না। এখন যেটা উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে নতুন নতুন কয়েকটা বিষয় এসেছে। যেমন- উচ্চকক্ষে আনুপাতিক নির্বাচন, সাংগঠনিক পরিষদ বা গণভোটের ব্যাপার। ফলে এ বিষয়গুলোতে প্রয়োজনে আরও কয়েকদিন লাগলেও দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে উপস্থাপন করলে ভালো হতো। এটা না হওয়ায় ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে।

 

তবে এখনো সরকারের কোর্টেই বল আছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ঐকমত্য কমিশন তার কাজ শেষ করেছে। কিন্তু সরকারের কাছে তো কাজ আছে। সরকার গণভোট বা অন্য বিষয়গুলো নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে পারে। তাদের বোঝাতে পারে, ঐকমত্যে আনতে পারে। ফলে আমার মনে হয়, আলাপ-আলোচনা করলে এই অনৈক্য কেটে যাবে।

 

সিনিয়র সাংবাদিক মাসুদ কামাল যুগান্তরকে বলেন, আগামী নির্বাচনে যেসব রাজনৈতিক দল অংশ নেবে, ধরেন ১০টি দল অংশ নেবে। তারা সবাই সরকার গঠন করে দেশ চালাতে চায়। তারা কি একইভাবে দেশ চালাবে? ১০টি দলের ১০ ধরনের প্লান আছে? সেই প্লান নিয়ে তারা জনগণের কাছে যাবে। জনগণ যাদের প্লান পছন্দ করবে, তাদের ভোট দেবে। ফলে যদি নতুন সরকার আসে, তারা কিভাবে দেশ চালাবে, সেটা তাদেরই বিষয়। সেটা কি অন্য কেউ ঠিক করে দেবে? কিন্তু এরা (জাতীয় ঐকমত্য কমিশন) বলতেছে, তোমরা যে-ই ক্ষমতায় আসো এভাবে দেশ চালাবে। এখন এগুলো যারা বলছে তারা কি জনগণের প্রতিনিধি? তারা কি এই দেশের জনগণকে সবচেয়ে ভালোবাসে? তারা তো অধিকাংশ দেশেই থাকে না। কতগুলো বিদেশি লোক, ভাড়াটে বুদ্ধিবীজী, আর কতগুলো এনজিও মিলে ঠিক করে দেবে দেশ কিভাবে চলবে? আমাদের দেশে রাজনৈতিক নেতা ও দলগুলো কি এগুলো মানবে?

 

তিনি আরও বলেন, যারা নিজেরাই দেশ ঠিকমতো চালাতে পারেন না, তারা অন্যদের কীভাবে ঠিক করে দেবেন-দেশ কীভাবে চালাতে হবে। ফলে কেন মানবে? কেউ মানবে না। এতদিন সবাই চুপচাপ সহ্য করে গেছে। সেখানে গেছে, চা-নাশতা, খাওয়াদাওয়া করেছে, আলোচনা করেছে। চলে এসেছে।

 

প্রসঙ্গত, গত ১২ ফেব্রুয়ারি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে সভাপতি করে সাত সদস্যের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠন করা হয়। এই কমিশনের সহসভাপতি করা হয় অধ্যাপক আলী রীয়াজকে। জানা গেছে, জুলাই সনদ চূড়ান্ত করতে ২০ মার্চ থেকে ৩১ জুলাই পর্যন্ত ৩০টির বেশি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ৬৭টি বৈঠক করেছে কমিশন। দুই পর্বের আলোচনায় ৮২টি সংস্কার প্রস্তাবে ঐকমত্য ও সিদ্ধান্ত হয়। এগুলো নিয়ে তৈরি করা হয় জুলাই সনদ। গত ১৭ অক্টোবর যেখানে রাজনৈতিক দলগুলো স্বাক্ষর করে। তবে এখনো স্বাক্ষর করেনি এনসিপিসহ আরও চারটি দল। স্বাক্ষর অনুষ্ঠানের পর থেকে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় ও পদ্ধতি-সম্পর্কিত সুপারিশ নিয়ে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা সভা করে কমিশন। বৈঠক করে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও। মঙ্গলবার ঐকমত্য কমিশন সনদ বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে তুলে দেয়। এরপর থেকেই এ নিয়ে সমালোচনায় সরব বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ রাজনৈতিক দলগুলো।

নারী ভোটারদের টানতে জামায়াতের বিশেষ কৌশল

প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩০ অক্টোবর , ২০২৫
নারী ভোটারদের টানতে জামায়াতের বিশেষ কৌশল
আরো পড়ুন

জামায়াতের নারী বিভাগের কর্মী ও নেত্রীরাও চালাচ্ছেন ভোটের প্রচারণা। ইসলামি সভার নাম করে বাড়িতে হয় নারীদের জমায়েত। সেই জমায়েতে ধর্মীয় আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে চলে ভোটের প্রচার। প্রচারণার এই কৌশলে একটি বিষয় পরিষ্কার যে, নারী ভোটাররাই প্রধান টার্গেট জামায়াতে ইসলামীর। এই টার্গেটে বহু আগে থেকেই চলছে কার্যক্রম। ফলে নারীদের মধ্যে ক্রমেই বাড়ছে তাদের ভোট। বিপরীতে পিছিয়ে পড়ছে বিএনপিসহ অন্য দলগুলো। নারী ভোটারদের পাশাপাশি অন্যান্য ধর্মাবলম্বী আর আওয়ামী লীগের ভোট বাগাতেও কাজ করছে জামায়াত। ‘ক্ষমতায় বিএনপি এলে এলাকায় থাকা মুশকিল হবে’ বলে বোঝানো হচ্ছে তাদের। একই সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে জানমাল রক্ষার প্রতিশ্রুতি। এসব কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জামায়াতের পক্ষে কাজ করছেন অনেক আওয়ামী লীগ নেতা। অন্যান্য এলাকায়ও জামায়াতে আস্থা রাখতে শুরু করেছেন নৌকার ভোটাররা।

 

পিরোজপুরের ২টি এবং পটুয়াখালীর ১টি আসনে রয়েছে জামায়াতের শক্ত প্রার্থী। বরিশালের বাকি ১৮টি আসনেও প্রার্থী ঘোষণা করেছে দলটি। বিএনপি যেখানে ভোটের মাঠে করছে মিছিল-সমাবেশ, সেখানে জামায়াতের দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। ব্যানার-পোস্টার তো দূরে, দাঁড়িপাল্লার পক্ষে প্রকাশ্যে ভোট চাওয়াও চোখে পড়ে না। কী করে চলছে তাদের প্রচার, তা-ই খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে পড়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিএনপি যখন রাজপথে মিছিল-সমাবেশে ব্যস্ত, ঠিক তখন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি ঢুকে পড়ছে জামায়াত। বিশেষ করে মহিলা ভোটারদের পক্ষে আনতে চলছে প্রাণপণ চেষ্টা। এক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা পালন করছেন জামায়াতের মহিলা বিভাগের কর্মীরা। পুরুষ যখন বাইরে ব্যস্ত কাজে, ঠিক তখন ঘরের নারীদের কাছে গিয়ে ইসলামি সভার দাওয়াত দিচ্ছেন তারা। ৮/১০টি বাড়ির নারীদের নিয়ে হচ্ছে ওই সভাউপস্থিত থাকছেন ৪০-৫০ জন করে নারীঅংশগ্রহণকারী কারও না কারও বাসাতেই হচ্ছে এই আয়োজনসেখানে কুরআন-হাদিস নিয়ে চলছে আলোচনাআয়াত আর সুরার বিশ্লেষণে বোঝানো হচ্ছে ইহকাল-পরকালবাছাই করা সুরার বাংলা অনুবাদে কৌশলে ঢোকানো হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যাখ্যাপরকালে বেহেশত পেতে হলে ইহকালে থাকতে হবে ইসলামের সঙ্গে, বলছেন তারাআর ইহকালের জীবনে যেহেতু রাজনীতি আর নির্বাচনও অন্তর্ভুক্ত, তাই কোথায় ভোট দিতে হবে, তা বলা হচ্ছে আকারে-ইঙ্গিতে

 

বরিশাল নগরীর ব্রাউন কম্পাউন্ড এলাকার বাসিন্দা এক গৃহকর্তা বলেন, ‘আমাদের এলাকায় তো বহু বছর ধরে চলছে মহিলাদের এমন সভার আয়োজন। স্থানীয়ভাবে আমরা যাকে জানি তালিম নামে। এসব তালিমে থাকেন কেবল নারীরা। যেহেতু ধর্মীয় বিষয় আর কোনো পুরুষ থাকে না, তাই এ নিয়ে কখনো মাথা ঘামাইনি। কিন্তু এখন তো শুনছি এটা নাকি জামায়াতের প্রচারণা।’

 

নগরীর কলেজ অ্যাভিনিউ এলাকার বাসিন্দা এক বেসরকারি চাকরিজীবী বলেন, ‘কথা প্রসঙ্গে হঠাৎ একদিন আমার স্ত্রী বলে যে এবার ভোট দেবে জামায়াতে। রাজনীতি সম্পর্কে তেমন ধারণা না থাকা স্ত্রীর এমন কথা শুনে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি সে নিয়মিত অংশ নেয় মহিলা জামায়াতের তালিমে। সেখানেই ধর্মীয় আলোচনা শুনে তার বিশ্বাস জন্মেছে যে জামায়াতে ভোট দিলে সওয়াব পাওয়া যাবে।’

 

বরিশাল নগরীর আরও কয়েকটি এলাকায় খোঁজ নিয়ে মিলেছে তালিমের নামে জামায়াতের পক্ষে এভাবে নারীদের উদ্বুদ্ধ করার প্রমাণ। কাউনিয়া এলাকার বাসিন্দা মধ্যবয়সি এক এনজিও কর্মী বলেন, ‘এখন বিষয়টি নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও এই তালিম তো চলছে বহু বছর ধরে। নগরীর প্রতিষ্ঠিত বহু মানুষের স্ত্রী-বোন জড়িত আছেন এর সঙ্গে। অন্তত ১২/১৩ বছর আগে থেকে কাউনিয়া এলাকার বিভিন্ন বাড়িতে চলছে এরকম তালিম। মহিলারা একত্রিত হয়ে ধর্ম নিয়ে আলোচনা করে মনে করে মাথা ঘামানো বা বাধা দেননি ঘরের কর্তারা।’

 

পটুয়াখালী-২ নির্বাচনি এলাকা বাউফল উপজেলায় জামায়াতের প্রার্থী হিসাবে আছেন দলের প্রভাবশালী কেন্দ্রীয় নেতা ডা. শফিকুল ইসলাম মাসুদ। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এখানে প্রতিটি ওয়ার্ডকে ৩/৪ ভাগে ভাগ করে ৪/৫ জনের একেকটি টিম করে দেওয়া হয়। এ টিম প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো বাড়িতে করে তালিমের আয়োজন। আশপাশের ১০/১২টি বাড়ির নারীরা অংশ নেন তালিমে। মাসজুড়েই চলে তালিমের নামে এভাবে কৌশলী প্রচার। খোদ বিএনপি নেতাদের বাড়িতে পর্যন্ত চলে মহিলা জামায়াতের এই তালিম। পৌর বিএনপির এক নেতার বাড়িতে নিয়মিত এমন তালিম আয়োজনের খবর মিলেছে। ইউনিয়ন-ওয়ার্ড পর্যায়ের বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়িও বাদ পড়ে না তালিমের তালিকা থেকে।

 

নাম-পরিচয় না প্রকাশের অনুরোধ করে পৌর বিএনপির এক নেতা বলেন, ‘মাত্র কদিন আগে বিষয়টি জানতে পেরে আমার বাড়িতে তালিম বন্ধ করেছি। এরা (জামায়াত) যে তৃণমূলের কতটা গভীরে গেছে, তা না দেখলে বিশ্বাস হবে না।’ বরিশাল নগরীতেও বিএনপির অনেক কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে চলে মহিলা জামায়াতের তালিম। স্থানীয় বিএনপির এক নেতার পরিবারের সদস্যরাও জড়িত এই তালিম আয়োজনে। নগরে এমন অন্তত ১৭টি বাড়ির সন্ধান মিলেছে, যেগুলোর কর্তা বিএনপির কর্মী-সমর্থক অথচ তাদের বাড়িতে চলে জামায়াতের তালিম।

 

তালিমের নামে ঘরে ঘরে নারী ভোটার বাড়ানোর পাশাপাশি আরও নানা কৌশলে চলছে জামায়াতের প্রচার। পিরোজপুর-১ (সদর-জিয়ানগর-নাজিরপুর) আসনে জামায়াতের প্রার্থী মরহুম মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ছেলে মাসুম সাঈদী। এখানেও নিত্যনতুন কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছে দলটি। জিয়ানগরে জামায়াতের রোকনের সংখ্যা ৯৩। কর্মী-সদস্য মিলিয়ে আছেন আরও ৩০ হাজার। এসব কর্মী-সদস্য-রোকনের ওপর রয়েছে কঠিন নির্দেশনা। প্রতিদিন মাথাপিছু কমপক্ষে ১ জন ভোটারের ভোট নিশ্চিত করতে হবে দাঁড়িপাল্লার পক্ষে। সপ্তাহান্তে দিতে হবে নিশ্চিত ভোটারের তালিকা। শুক্র ও শনিবার দলের ৪০/৫০ জন কর্মী ছোট ছোট গ্রুপে ভাগ হয়ে প্রচার চালান বাড়ি বাড়ি। ওয়ার্ডভিত্তিক অন্তত ৪টি মসজিদে আসরের নামাজে দাওয়াত দিয়ে আনা হয় লোকজন। এশা পর্যন্ত চলে ইসলামিক আলোচনা। এর ফাঁকে কৌশলে চালানো হয় ভোটের প্রচার।

 

সবচেয়ে চমকপ্রদ ঘটনা ঘটেছে পিরোজপুর-২ নির্বাচনি এলাকার স্বরূপকাঠি উপজেলায়। এখানে জামায়াতের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগ নেতারা। তাদের মধ্যে রয়েছেন গুয়ারেখা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল লতিফ, ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এসাহাক শেখ, ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য কাউয়ুম শেখ ও আওয়ামী সমর্থক মৌলবি জসিমউদ্দিন। সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের অনেকেও এখন জামায়াতের ছায়াতলে। আব্দুল লতিফ শেখ বলেন, ‘আমি ওমরাহ করে এসেছি। শেষ জীবনে ইসলামি লাইনে থাকতে চাই। তাই জামায়াতের পক্ষে কাজ করছি।’ পরিচয় না প্রকাশের শর্তে জামায়াতের পক্ষে কাজ করা বেশ কয়েকজন আ.লীগ কর্মী বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমাদের ওপর ব্যাপক নির্যাতন চালিয়েছে বিএনপি। দখল, চাঁদাবাজি-এমন কিছু নেই যা তারা করেনি। এখন আবার শুনছি স্বরূপকাঠি থেকে নাকি প্রার্থী দেবে তারা। স্থানীয় কেউ এমপি হলে তো বিএনপির অত্যাচারে এলাকা ছাড়তে হবে। তাই জামায়াতের পক্ষে কাজ করছি।’ এসবের পাশাপাশি ৭/৮ মাস আগে ভোটকেন্দ্রভিত্তিক কমিটি করেছে জামায়াত। প্রতি কমিটিতে ৯ জন নারীসহ রয়েছেন ১৫০ সদস্য। কেন্দ্র নিয়ন্ত্রণসহ যে কোনো পরিস্থিতি সামলাতে তাদের দেওয়া হয় নিয়মিত প্রশিক্ষণ। প্রচার-তালিম-ভোটকেন্দ্র

 

দরিদ্র অসহায় মানুষকে সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রেও অবলম্বন করা হচ্ছে গোপনীয়তা। দরিদ্র অনেক পরিবারকে দেওয়া হচ্ছে নিয়মিত মাসিক সহায়তা। জুলাই যুদ্ধে আহত আর শহীদপরিবারগুলো আছে এ তালিকায়। এসব সহযোগিতার বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের পর্যন্ত জানানো হয় না।

 

জামায়াতে ইসলামীর বরিশাল মহানগর আমির জহিরউদ্দিন মুহাম্মদ বাবর বলেন, ‘১৭ বছর আগে থেকে আমাদের মহিলা বিভাগের এই তালিম চলছে। সেখানে ইসলাম আর কুরআন-হাদিস নিয়ে আলোচনা করেন নারীরা।’ এসব তালিমে ভোটের প্রচার হয় কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘নির্বাচন কিংবা ভোট কি ইসলামের বাইরে? জীবনবিধানের সবকিছুই তো ইসলামের অন্তর্গত। আমরা যেহেতু একটি রাজনৈতিক দল, তাই আমাদের তালিমে ইসলামের পাশাপাশি ভোটের প্রচার চলবে, সেটাই তো স্বাভাবিক। তবে মসজিদ ব্যবহার করে রাজনৈতিক প্রচারণার যে অভিযোগ, তা সঠিক না। আমরা মসজিদকে ব্যবহার করে কখনোই রাজনৈতিক কোনো কর্মকাণ্ড পরিচালনা করি না।’

ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’, ভারতের ৩ রাজ্যে সতর্কতা

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর , ২০২৫
ধেয়ে আসছে ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’, ভারতের ৩ রাজ্যে সতর্কতা
আরো পড়ুন

বঙ্গোপসাগরে উদ্ভূত ঘূর্ণিঝড় ‘মন্থা’ ক্রমশ উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে। ভারতের কেন্দ্রীয় আবহাওয়া দপ্তরের (আইএমডি) সর্বশেষ বুলেটিন অনুসারে, শেষ ছয় ঘণ্টায় দক্ষিণ-পশ্চিম এবং সংলগ্ন পশ্চিম-মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে ঘণ্টায় ১৭ কিলোমিটার গতিতে স্থলভাগের দিকে এগোচ্ছে ‘মন্থা’।

 

আইএমডি বুলেটিনের তথ্য বলছে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য অন্ধ্রের কাকিনাড়া এবং কলিঙ্গপত্তনম উপকূলের মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে পড়বে মোন্থা।

 

আইএমডির সর্বশেষ বুলেটিন দেওয়া হয়েছে সোমবার রাত ৯ টার দিকে। সেখানে বলা হয়েছে, মঙ্গলবার সকালের মধ্যে ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হবে। ‘প্রবল’ আকারেই মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর অন্ধ্রপ্রদেশের মছলিপত্তনম এবং কাকিনাড়ার কাছে কলিঙ্গপত্তনম উপকূলের মধ্যবর্তী অংশে আছড়ে পড়বে। এ সময় ওই অঞ্চলে বাতাসের সর্বোচ্চ গতি থাকবে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১০০ কিলোমিটার। দমকা হাওয়ার বেগ ছুঁতে পারে ১১০ কিলোমিটারের গণ্ডিও।

 

ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় দুই রাজ্য তামিলনাড়ু, অন্ধ্র এবং পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ওড়িশায় ইতিমধ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। উপকূল থেকে সরানো হয়েছে লোকজনকে। ওই তিন রাজ্যে মঙ্গলবার বন্ধ থাকছে স্কুল। বাতিল করা হয়েছে বেশ কিছু ট্রেন।

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কমিশনের সুপারিশ জমা আজ

প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর , ২০২৫
জুলাই সনদ বাস্তবায়ন কমিশনের সুপারিশ জমা আজ
আরো পড়ুন

সরকারের কাছে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের উপায় সম্পর্কিত সুপারিশ দিতে যাচ্ছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুপুর ১২টায় আনুষ্ঠানিকভাবে এই সুপারিশ হস্তান্তর করা হবে।

 

এর আগে সোমবার বিকেলে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় অনুষ্ঠিত হয় কমিশনের সমাপনী বৈঠক। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টা ও কমিশন সভাপতি ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

 

এতে উপস্থিত ছিলেন কমিশনের সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ সহ ৬ সদস্য ও প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। অন্য সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ বাস্তবায়নেও সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন কমিশন সদস্যরা।

 

এসময়, কমিশন গঠনের পর থেকে চূড়ান্ত সুপারিশ প্রদান পর্যন্ত সমস্ত ডকুমেন্ট, আলোচনার ভিডিও, অডিও, ছবি সংরক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

 

গত ১৭ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় জুলাই সনদের স্বাক্ষর অনুষ্ঠান। এতে বিএনপি-জামায়াতসহ প্রথম ধাপে ২৪টি রাজনৈতিকদল ও জোট এতে স্বাক্ষর করেন। এর ২ দিন পরে জাতীয় জুলাই সনদে স্বাক্ষর করে গণফোরাম।

 

তবে এখনও সই করেনি এনসিপিসহ কয়েকটি বাম দল। জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম বৈঠক বসে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি।

 

জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বাংলাদেশে একটি স্থায়ী জবাবদিহিমূলক রাষ্ট্রের ভিত্তি স্থাপনের জন্য কাজ করেছে- উল্লেখ করে কমিশন সহ-সভাপতি আলী রীয়াজ বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলের পাশাপাশি আইন বিশেষজ্ঞ, বিচারপতি, শিক্ষাবিদসহ নাগরিক সমাজের বিশিষ্টজনের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের সুপারিশ চূড়ান্ত করা হয়েছে।’