বাংলাদেশের সরকার চলার কথা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন থেকে। কিন্তু চলছে ভিন্ন এক সংসদ থেকে। এই সংসদের নাম কাওরান বাজার। কি কিনফিউশন ফিল হচ্ছে ? এটাই আপাতত প্রমানিত সত্য। কারণ এই এলাকাতেই রয়েছে মোদী সরকারের ওপেনলি সিক্রেট দুইটি মুখপাত্র প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার। এই দুটি দৈনিক যা দেখাতে চাচ্ছে ইউনুস সরকার তাই দেখছে, যা বলাতে চাচ্ছে পুতুল সরকার তাই বলছে।
এদিকে আবার হয়েছে গোদের উপর বিষফোঁড়া। অর্থাৎ,প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারকে পেছন থেকে মদদ দিচ্ছে দুই ক্রিমিনাল শিল্পগোষ্ঠী-মেঘনা গ্রুপ ও হামিম গ্রুপ। তাঁদের পরিচয় কার কাছে কেমন সেটার জানার আগে সবাই জানে তারা ফ্যাসিস্ট হাসিনার কতটা পোষ্য ছিলো। তারা ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে ছড়ি ঘুড়াচ্ছেন ইউনুস সরকারের উপর। এই দেশটাকে পাথর চাপা দিয়ে উপর থেকে পানি খেয়ে কাকের মতো উড়ে যাওয়ার ধান্দা করছে মেঘনা গ্রুপ ও হামিম গ্রুপ।
যাই হোক,গত আগস্টে দেশ স্বৈরাচার মুক্ত হয়েছে। দুর্নীতিবাজ অপরাধীদের কেউ জেলে রয়েছে,কেউ পালিয়েছে। বিশ্বাসের চূড়ান্ত পর্যায়ে গিয়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ইউনুস সাহেবকে। কিন্তু কি উদ্ধার হয়েছে? আমাদের প্রাপ্তির তালিকা কতটুক দীর্ঘ হয়েছে? এখনো দেশের চিত্র জানতে নির্ভর করতে হচ্ছে ভারতপন্থী ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর উপর। যার অধিকাংশই মিথ্যা।
দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার চিত্র কখনো উঠে আসেনি গণমাধ্যম দুটিতে। বিজিএমইএ তথ্য অনুসারে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০২৫ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট ১৮২টি কারখানা বন্ধ হয়েছে,চাকরি হারিয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার ২৭৫ জন শ্রমিক। শিল্প পুলিশের তথ্য আরও ভয়াবহ। তারা বলছে,গত এক বছরে পোশাক কারখানাসহ ২৫৮টি কারখানা স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়েছে,বেকার হয়েছেন প্রায় ১ লাখ চার হাজার শ্রমিক। সাম্প্রতিক তথ্যও আরও নিচের দিকে যাচ্ছে। ১৩০টি কারখানায় ইতোমধ্যে শ্রমিক অসন্তোষ দেখা দিয়েছে,অস্থিরতা চলমান রয়েছে ৩৪টি কারখানায়।
যেই পোশাক শিল্পের উপর নির্ভর করে বাংলাদেশ চলছে,সেই শিল্পকে এভাবে ডুবতে দেখে কি করেছে বর্তমান সরকার? কোথায় নামিয়ে নিয়ে আসছে দেশের কেন্দ্রীয় অর্থনীতিকে। দেশ চলছে রেমিটেন্সের উপর। এই রেমিটেন্স বন্ধ হয়ে গেলে বাংলাদেশের অবস্থা হবে ১৯৯২ সালের বসনিয়ার মতো। যেখানে শিক্ষিত বেকার যুবকরা হয়ে উঠেছিলো নৃশংস অপরাধী।
বিশেষজ্ঞরা বলছে, পোশাক উৎপাদনের নতুন অর্ডার আসছে না। তাই বন্ধ হয়ে যাচ্ছে কারখানা। বিশিষ্ট ব্যবসায়ীদের অধিকাংশেরই রয়েছে বিদেশ যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা। তারা যেতে পারছেন না,বিদেশি ক্লাইন্টদের সাথে মিটিং করতে পারছেন না। কাজ আসবে কোথা থেকে? এটা কী দেশ ডুবানোর ষড়যন্ত্র? বেকার বাড়ার সাথে সাথে বাড়বে অপরাধীর সংখ্যা।
আপনাদের কী মনে হয়, গত ১ বছরের বাংলাদেশের অপরাধের চিত্র কেমন। একটি বেসরকারি জরিপ বলছে, গত ১০ মাসে ৩ হাজার ৫৫৪টি খুন হয়েছে। অর্থাৎ প্রতিদিন ১১ জন খুন হচ্ছেন। এটা কোন দিক থেকে স্বাভাবিক? শুধু কি তাই- ধর্ষণ মামলা হয়েছে ৪,১০৫টি। অর্থাৎ প্রতিদিন হায়নার শিকার হচ্ছেন ১২ জন নারী। অপহরণ মামলা হয়েছে ৮১৯টি। নারী ও শিশু নির্যাতন মামলা হয়েছে ১২,৭২৬টি। ডাকাতির মামলা হয়েছে ৬১০টি। আর ছিনতাই এই দেশে মহামারীর আকার নিয়েছে। ১০ হাজার ৩১০টি ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে গত ১০ মাসে। অর্থাৎ প্রতিদিন ৩৫ জন ছিনতাইয়ের শিকার হচ্ছে।
দেশের এমন অস্থির ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্ট হচ্ছে ভারত থেকে মোদীর কলকাঠিতে। সরকার ব্যর্থ হচ্ছে প্রসাশনকে ব্যবহার করতে।
এদিকে, প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের উপর ভর করে নানান ভাবে সরকারকে চাপে রাখছে হামিম গ্রুপের এ কে আজাদ ও মেঘনা গ্রুপের মোস্তফা কামাল। যারা, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে আসন্ন নির্বাচনের আগে বাঁচাতে,ফেরাতে ও পূনর্বাসনে কাজ করে যাচ্ছে ক্লান্তিহীন ভাবে। সরকার জেনেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এ কে আজাদকে উদ্দেশ্য করে তার বাড়ির সামনে সম্প্রতি স্লোগান দেওয়া হয় ‘আওয়ামী লীগের দোসররা হুঁশিয়ার সাবধান,‘ফ্যাসিবাদের দোসররা হুঁশিয়ার সাবধান’। এই আজাদ ফ্যাসিস্ট হাসিনার পা আঁকড়ে থেকে কি সুবিধা নেননি? এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি হয়েছেন। এমপি হয়েছেন। নোয়াবের সভাপতি হয়েছেন।হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার কয়েকদিন আগে শীর্ষব্যবসায়ীদের সাথে বৈঠক করেছিলেন। সেখানেও শেষ পর্যন্ত হাসিনার পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন তিনি। আর এখন গোপনে পুনর্বাসন করছেন গুপ্ত আওয়ামী ও ছাত্রলীগদের।
লীগের ক্ষমতার জোরে গাজীপুরের শালবনের হাজার বিঘা জমি জবরদখল করে গড়ে তুলেছেন শিল্পপার্ক। আর ব্যবসায়িক সুবিধা নিতে হাজার কোটি টাকার ঋণও নিয়েছেন,করেছেন অর্থ পাচার। এ কে আজাদের বিরুদ্ধে ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের তথ্য থাকা সত্যেও অনুসন্ধান করেনি সরকার। সংবাদ ছাপায়নি প্রথম আলো বা ডেইলি স্টার।
এই দুই জাতীয় শত্রু পত্রিকা ও ব্যবসায়ীর সাথে যোগ দিয়েছে হরাধনের সবচেয়ে দুর্নীতিবাজ পুত্র মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল। কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরও মেঘনা গ্রুপের ৮০ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচারের অভিযোগে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পরামর্শ দিলেও সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের মালিক মোস্তফা কামাল তার মালিকানাধীন ৭০টি ব্যবসা ও শিল্পগুলোর এলসির বিপরীতে ভুয়া ও জাল ইন্স্যুরেন্স কভারনোট ইস্যুর মাধ্যমে ২১ বছরে (২০০০-২০২০) বিমা কোম্পানিটির এক লাখ কোটি টাকারও বেশি আত্মসাৎ করেছে।
এরপরেও বীরদর্পে এই দেশের হাওয়া জল অপচয় করে যাচ্ছেন মোস্তফা কামাল। আর নির্বিকার ভাবে দেখে যাচ্ছে নির্লজ্জ সরকার। নেই কোনো পদক্ষেপ। কারণ, কাওরান বাজার সংসদ থেকে কোনো ফর্মান আসে নাই। শয়তানের পূজারী প্রথম আলো বা ডেইলি স্টার যখন কারো বিচার চায়না তখন মনে হয় সরকার প্রশাসনও কিছু করতে পারে না।
সেক্ষেত্রে মনে হচ্ছে বর্তমান সরকার আসলেই কাওরান বাজার থেকে চলছে।