সিলেটের জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র ভোলাগঞ্জের 'সাদাপাথর' এলাকা থেকে শত শত কোটি টাকার পাথর লুটের ঘটনায় এবার প্রকাশ্যে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫) দুদকের মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন সাংবাদিকদের এই তথ্য নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, একটি এনফোর্সমেন্ট অভিযানের প্রাথমিক প্রতিবেদনের ভিত্তিতে কমিশন এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
দুদকের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে, সাদাপাথর লুটের এই মহোৎসবে জড়িত রয়েছে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ এবং সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর আগে, গত আগস্ট মাসে দুদকের সিলেট কার্যালয়ের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে এবং ১৬ আগস্ট তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। সেই প্রতিবেদনে প্রায় ৫২ জন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের জড়িত থাকার তথ্য উঠে আসে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অবৈধভাবে পাথর উত্তোলনের জন্য প্রতি ট্রাক থেকে প্রশাসন ও পুলিশকে মোটা অঙ্কের কমিশন দেওয়া হতো। প্রতিটি ট্রাকের পাথর পরিবহনে পুলিশ ও প্রশাসনের জন্য ১০ হাজার টাকা করে আলাদা করা হতো। এর মধ্যে পুলিশ পেত পাঁচ হাজার টাকা এবং উপজেলা প্রশাসন পাঁচ হাজার টাকা। একই সঙ্গে, প্রতিটি বারকি নৌকা থেকে এক হাজার টাকা নেওয়া হতো, যার অর্ধেক পুলিশ ও বাকি অর্ধেক প্রশাসন পেত।
দুদক কর্মকর্তারা জানান, এই অনুসন্ধানটি মূলত দায়-দায়িত্ব নির্ধারণের জন্য করা হচ্ছে। যেসব নথিপত্র এবং তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে, তার ভিত্তিতে যাদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হবে, তাদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সাদাপাথর লুটের ঘটনায় ইতোমধ্যে প্রশাসনের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গাফিলতি ও নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ উঠেছে। এতে স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলা, ব্যর্থতা এবং ক্ষেত্রবিশেষে সরাসরি যোগসাজশ থাকার বিষয়টিও দুদকের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এই ঘটনায় জড়িতদের মধ্যে প্রশাসন ও পুলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা ও ব্যবসায়ীদের নামও এসেছে।
দুদকের এই প্রকাশ্য অনুসন্ধানকে অনেকেই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদ রক্ষা এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন। আশা করা হচ্ছে, এই তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের অপরাধ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।