
চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং আয়োজিত সাম্প্রতিক সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাত ধরে হাসিমুখে দেখা যাওয়ার ছবি নতুন প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যুক্তরাষ্ট্র বহুদিন ধরেই ভারতকে নিজেদের কূটনৈতিক প্রভাববলয়ে টানার চেষ্টা করছিল, কিন্তু ট্রাম্পের নীতির কারণে সে প্রচেষ্টা এখন দুর্বল হয়ে পড়ছে।
দীর্ঘদিন নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণকারী ভারতকে চীন ও রাশিয়ার প্রতিরোধশক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে চেয়েছিল ওয়াশিংটন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ট্রাম্প প্রশাসনের ৫০% শুল্ক আরোপ, সস্তা রাশিয়ান তেল কেনায় নয়াদিল্লিকে প্রকাশ্যে সমালোচনা—এসব পদক্ষেপে দুই দেশের সম্পর্কে টানাপোড়েন বেড়েছে।
এদিকে চীন, রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার নেতাদের একসঙ্গে মঞ্চে দাঁড়ানো এবং সেখানে মোদির উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কূটনৈতিক ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ অ্যাশলি টেলিস মন্তব্য করেছেন, ‘মার্কিন-ভারত সম্পর্ক এক নিম্নমুখী চক্রে আটকে গেছে, কারণ দুই নেতা সম্পর্ক পুনর্গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিতে চাইছেন না।’
ভারতও ট্রাম্প প্রশাসনের নানা মন্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েছে। পাকিস্তানকে সম্মান দেওয়া, কাশ্মীর ইস্যুতে মধ্যস্থতার দাবি এবং দিল্লির প্রস্তাবিত বাণিজ্য সমাধান প্রত্যাখ্যান—এসবকে তারা ‘অন্যায্য’ বলে মনে করছে।
ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের বিশেষজ্ঞ তানভি মাদান বলেন, ‘যখন ট্রাম্প নিজেই পুতিনকে রাষ্ট্রীয় অভ্যর্থনা দিয়েছেন ও শির সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করা উল্টো নয়াদিল্লির কৌশলগত স্বায়ত্তশাসনের আকাঙ্ক্ষা আরও বাড়িয়ে দেবে।’
ট্রাম্পের মুখপাত্র দাবি করেছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদি ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের মধ্যে সম্মানজনক সম্পর্ক রয়েছে। কূটনীতি, প্রতিরক্ষা ও বাণিজ্যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।’
কিন্তু ভারতীয় কর্মকর্তারা বেনামে জানিয়েছেন, দিল্লি যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও সাম্প্রতিক সময় চীনের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার প্রক্রিয়া চলছে, যা সরাসরি ওয়াশিংটনকে লক্ষ্য করে নয়। উল্লেখযোগ্য যে, সীমান্ত সংঘর্ষ ও দীর্ঘ বৈরিতার পর সাত বছরে এটাই মোদির প্রথম চীন সফর।
ট্রাম্প শুরুতে ভারতকে কাছে টানতে ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানসহ নানা পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং কোয়াড (ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান ও অস্ট্রেলিয়ার জোট) পুনরুজ্জীবিত করেছিলেন। কিন্তু শিগগিরই বাণিজ্য ঘাটতি, ভিসা নীতি ও অভিবাসন ইস্যুতে তিনি নয়াদিল্লির প্রতি কঠোর অবস্থান নেন।
ভারত নভেম্বর মাসে কোয়াড সম্মেলন আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে চীনের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ইস্যুতে জোর দেওয়া হবে। কিন্তু এখনো ট্রাম্পের ভারত সফরের কোনো তারিখ নির্ধারিত হয়নি। বিশ্লেষকরা বলছেন, ট্রাম্প মূলত চীনের সঙ্গে বড় বাণিজ্য চুক্তির দিকে নজর দিচ্ছেন।
সাবেক মার্কিন কর্মকর্তা ব্রেট ব্রুয়েনের ভাষায়, ‘ভারত এমন একটি দেশ যাকে ট্রাম্পের ইচ্ছায় সহজে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তাদের কাছে বিকল্প রয়েছে।’